দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যথা অনুভূত হতে থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে যথাযথভাবে জীবনযাপন করতে হবে। চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি দরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করবেন এবং সঠিকভাবে রোগটি নির্ণয় করবেন। হাঁটুব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হলে ক্ষেত্রবিশেষে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
ব্যথার কারণ : এক-দুটি কারণে আসলে হাঁটুতে ব্যথা হয় না। এর অনেকগুলো কারণ থাকে। কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বয়সজনিত অস্থিসন্ধির ক্ষয় বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস নামক রোগ। এছাড়া হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত পাওয়া, অস্থিসন্ধির মাঝে দূরত্ব কমে যাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, বাতসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে হাঁটুতে তীব্র ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের হাঁটুব্যথায় ভোগার হার বেশি।
উপসর্গ : হাঁটুব্যথার পাশাপাশি রোগীর হাঁটু ফুলে যাওয়া, হাঁটুর সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটু লালবর্ণ ধারণ করা, হাঁটুতে গরম অনুভব করা- এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ সময় হাঁটাচলা বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হয়। চলাফেরার সময় হাঁটু ভাঁজ করলে শব্দ হতে পারে, ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ রোগের কারণে হাঁটুর শক্তি কমে যায়। ফলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি : হাঁটুব্যথায় বরফ কিংবা গরম পানির সেঁক আরাম দিতে পারে। তবে কখন ও কোন প্রক্রিয়ায় এ সেঁক দিতে হবে, সেটির জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আঘাতের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে বরফ কিংবা ঠাণ্ডা সেঁকে আরাম পাওয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসজনিত ব্যথায় গরম পানির সেঁক সবচেয়ে বেশি কার্যকর। হাঁটুব্যথার রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন। তাতে ব্যথা অনেকখানিই উপশম হতে পারে। পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাঁটুব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।
হাড়ের ক্ষয়জনিত কারণে হাঁটুতে ব্যথা হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় রোগীর অস্থিসন্ধিতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় শেষ চিকিৎসা হিসেবে হাঁটু প্রতিস্থাপন করার দরকার হয়ে পড়ে। তবে ওজন কমানো ও দৈনন্দিন জীবনধারায় পরিবর্তন আনা সম্ভব না হলে হাঁটুব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বয়স বাড়লে শরীরে দেখা দিয়ে থাকে নানা ধরনের রোগব্যাধি। এসব থেকে দূরে থাকতে অবশ্যই আপনাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।
লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ৪০৭ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এভিনিউ, ফিনিক্স টাওয়ার, ঢাকা।