ডা. তানভীর আহমেদ চৌধুরী: মূত্রথলির ক্যান্সার মূত্রতন্ত্রের ক্যান্সারগুলোর মধ্যে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। দেশেও এখন এ ধরনের রোগী দিন দিন বাড়ছে। এ ক্যান্সারগুলোর আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। সবচেয়ে বেশি যেটা হয়, তাকে বলে ইউরোথেলিয়াল কার্সিনোমা।
রোগী কী নিয়ে আসে : কিছু রোগী অন্য কোনো কারণে আলট্রাসনোগ্রাম করে (ইনসেডেন্টাল ফাইন্ডিংস) এবং তখন দেখা যায়, মূত্রথলিতে টিউমার আছে। এদের তেমন উপসর্গ থাকে না। সাধারণত ৬০-৭০ বছর বয়সী রোগীদের এ ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে সব বয়সেই এ ক্যান্সার হতে পারে।
lপ্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া সবচেয়ে কমন এবং অ্যালার্মিং সাইন। ব্যথাহীন, বিরতি নিয়ে লাল টকটকে অথবা কালো চাকা চাকা রক্ত যেতে পারে।
lসাদা সাদা ছোট মাংসখণ্ডের মতো পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে যেতে পারে।
lপ্রস্রাবে জ্বালা করা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
lতলপেটে ব্যথা প্রস্রাবে প্রদাহ নিয়ে আসে।
lক্যান্সারটি ছড়িয়ে পড়লে লম্বা সময় ধরে কাশি, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায় রোগীর মধ্যে।
কী কারণে হয় : আমাদের শরীরের কোষের ভেতর যে জিন রয়েছে, তার পরিবর্তনই এ ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ।
করণীয় : প্রস্রাবে রক্ত দেখলেই কোনোভাবে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগটি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয় : উপসর্গ বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রথলির ক্যান্সারের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। যেমন– প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই/সিটি স্ক্যান করা হয়। কনফার্ম হওয়ার জন্য অপারেশনের পর হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল এক্সামিনেশন, যাকে আমরা প্রচলিতভাবে ‘বায়োপসি’ বলি।
চিকিৎসা : প্রাথমিকভাবে এন্ডোস্কপিক অপারেশন করেই রোগ নির্ণয়, স্টেজিং করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে এ অপারেশন করা হয় এবং বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই এ চিকিৎসা ব্যবস্থা চলে আসছে। ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী, পরবর্তী চিকিৎসা ও ফলোআপ ঠিক করা হয়।
কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি
lসুস্থ জীবনযাপন প্রণালি মেনে চলা।
lধূমপান ছেড়ে দেওয়া বা না করা, তামাক বা জর্দা না খাওয়া।
lসঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
lপরিমিত পানি পান করা।
lভিটামিন-সি যুক্ত খাবার গ্রহণ।
lতাজা ফলমূল, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
lকলকারখানায় বা কীটনাশক সার ব্যবহারের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা; মাস্ক, গ্লাভস পরিধান করা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কনসালট্যান্ট, মনোয়ারা হসপিটাল (প্রা.) লিমিটেড, সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।