মানবদেহে মুখের ভেতর লালা নিঃসরণকারী তিন ধরনের গ্রন্থি রয়েছে। লালাগ্রন্থিকে সালিভারি গ্লান্ড এবং সালিভা বলা হয়। লালাগ্রন্থি লালা নিঃসরণ করে খাবার হজমে সাহায্য করে; মুখের ভেতরের তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং লালা মুখের ভেতরকে ভেজা রেখে কথা বলতে সাহায্য করে।
লালাগ্রন্থিতে ইনফেকশন হলে গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না; ফলে মুখের ভেতর জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে; তবে সবচেয়ে বেশি ঘটে ভাইরাসের কারণে। এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। কানের নিচে, চোয়ালের পেছনে দুটি লালাগ্রন্থি থাকে, যেটাকে চিকিৎসকের ভাষায় বলা হয় প্যারোটিড গ্রন্থি।
যখন প্যারোটিড গ্রন্থি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়, তখন এটিকে চিকিৎসকরা বলে থাকেন প্যারোটাইটিস। আর যখন মাম্পস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়, তখন তাকে বলে মাম্পস। একবার মাম্পস আক্রান্ত হলে বা টিকা দেওয়া থাকলে সারাজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে।
কীভাবে ছড়ায় মাম্পস ভাইরাস সাধারণত শ্বাসনালি পথে আক্রমণ করে। মাম্পসের লক্ষণ প্রকাশের দু’দিন আগে থেকে এবং প্রকাশের পর পাঁচ দিন পর্যন্ত মাম্পস ছড়াতে থাকে। এ জন্য মাম্পস প্রকাশের প্রথম পাঁচ দিন বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করা হয়।
লক্ষণ দেখে মাম্পস রোগ কীভাবে বোঝা যাবে মাম্পস হলে গালের দু’পাশের প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায়, সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। তবে এক পাশেও ফুলতে পারে। কান ওপরে উঠে যায় সামান্য। শরীরে অনেক জ্বর থাকে। ঢোক গিলতে ব্যথা লাগে; আক্রান্তরা সহজে খেতে পারে না। কথা বলতে কষ্ট হয়। মুখে দুর্গন্ধ হয়। সাধারণত গ্রন্থির ফোলা কমতে এক সপ্তাহ সময় লাগে।
মাম্পসের চিকিৎসায় ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ব্যথানাশক এবং জটিলতাজনিত ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া বা কুলকুচি করতে বলা হয়। প্রচুর পরিমাণ পানি পানের উপদেশ দেওয়া হয়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাদ্য দেওয়া উচিত। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কারণ মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখতে হবে।
সঠিক চিকিৎসা না হলে এ থেকে পরে জটিলতা হতে পারে।
মাম্পসের আক্রমণ প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বাচ্চাকে সময়মতো এবং নিয়মমতো এমএমআর টিকা দিন। শিশুর ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে এক ডোজ এবং পরে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে আরেক ডোজ বুস্টার মাম্পস ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিত করুন।
লেখক: নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল