ডা. সাহিদা সুলতানা সিমু: মাথা ঘোরা বা ভারটাইগো হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে মনে হয় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুরছেন বা তার চারপাশ ঘুরছে। সঙ্গে থাকে বমি বমি ভাব ও বমি। মাথা ঘোরার রয়েছে নানা কারণ।
যেমন–
-বিনাইন প্যারোক্সিসমাল পজিশনাল ভারটাইগো
এটি খুব মারাত্মক নয়। চিকিৎসায় এটি পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ করে মাথা কোনো একদিকে ফেরালে বা মাথা শুধু একটি নির্দিষ্ট দিকে ফেরালে মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যায়।
-অন্তঃকর্ণের প্রদাহ
সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার অন্তঃকর্ণে সংক্রমণের ফলে মাথা ঘোরা দেখা দিতে পারে। এতে হঠাৎ করেই মাথা ঘোরা শুরু হয়। পাশাপাশি শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
-মেনিয়ার্স ডিজিজ
এটিও কানের একটি রোগ। তিনটি উপসর্গ থাকে একসঙ্গে। মাথা ঘোরা, কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ শব্দ করা ও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া। আক্রান্তরা কিছুদিন পুরোপুরি সুস্থ থাকেন।
-অ্যাকোস্টিক নিউরোমা
এটি স্নায়ুর টিউমার। এ ছাড়া সেরেবেলার রক্তক্ষরণ, মাল্টিপল স্কেরোসিস, মাথায় আঘাত, মাইগ্রেনেও হতে পারে মাথা ঘোরা।
চিকিৎসকের যখন প্রয়োজন
বেশির ভাগ মাথা ঘোরাই মারাত্মক নয়। তার পরও মাথা ঘোরা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, মাথা ঘোরার পেছনে মারাত্মক কিছু কারণও আছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন, কী কারণে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাথা ঘোরার সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, একটি জিনিস দুটি দেখা, হাঁটতে সমস্যা, কথা জড়ানো বা স্পষ্ট না হওয়া, শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।
মাথা ঘোরার চিকিৎসা
বিপিপিভি হলে সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। যদি সমস্যা খুব বেশি হয়, তাহলে প্রমেথাজিন, মেরিজিন সেবন করা যেতে পারে; তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো। মাথা ঘোরা শুরু হলে এসব ওষুধ সেবন না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। ওষুধ সেবন করে চিকিৎসকের কাছে গেলে আসল রোগ নির্ণয় করতে সময় লাগে।
বিপিপিভি আক্রান্তদের জন্য কিছু ফিজিওথেরাপি আছে। ভেস্টিবুলার রিহ্যাবিলিটেশন এক্সারসাইজ, যা এপলি ম্যানুভার নামে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি টেবিলে বসানো হয়। মাথা কোনো একদিকে কাত করে তাঁকে টেবিলের প্রান্তে মাথা নিচু করে শোয়ানো হয়। এভাবে মাথা ঘোরা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত রাখা হয়। মাথা ঘোরা বন্ধ হলে আবার টেবিলে বসানো হয়। এবার মাথা অন্যদিকে কাত করে শুয়ে রাখা হয়। অন্তঃকর্ণের প্রদাহের কারণে মাথা ঘোরা হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন পড়ে।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।