মাথার ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চর্মরোগ সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এর মাধ্যমে। এই রোগের কারণে আক্রান্ত স্থান লাল এবং খসখসে হয়ে যায়, খুশকি দেখা দেয়। এমনকি সেবোরিক ডার্মাটাইটিস হলে মুখমণ্ডল, বুকের উপরের অংশ এবং পিঠের মতো শরীরের তৈলাক্ত অংশেও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত সেবোরিক ডার্মাটাইটিস পুরো শরীরের উপর প্রভাব ফেলে না, কিন্ত এর কারণে অস্বস্তিবোধ হয়। এটি কোনো সংক্রামক রোগ নয় আবার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। দেখা যায়, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। প্রতিকারের জন্য বারবার চিকিৎসা নেয়া লাগতে পারে। তবে সেরে যাওযার পরও আবার দেখা দিতে পারে। সেবোরিক ডার্মাটাইটিস খুশকি, সেবোরিক একজিমা বা সেরাইওসিস নামেও পরিচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগকে ক্রেডল ক্যাপ বলা হয়।
কারণ সমূহ: সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। * ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরনের ইস্ট (ছত্রাক) যা ত্বকের তৈলগ্রন্থিতে থাকে। * সোরিয়াসিসের (এক ধরনের চর্ম রোগ) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রদাহজনিত (ইনফ্ল্যামেটরি) প্রতিক্রিয়া। * বসন্ত ও শীতকালের শুরুতে এই রোগ তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
লক্ষণ সমূহ: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়। * ত্বকের ফুসকুড়ি (Skin rash) * শুষ্ক খসখসে ত্বক (Skin dryness, peeling, scaliness, or roughness) * অস্বাভাবিক ত্বক (Abnormal appearing skin) * ত্বকে চুলকানি (Itching of skin) * মাথার অস্বাভাবিক ত্বক (Irregular Appearing scalp) * মাথার ত্বকে চুলকানি (Itchy scalp) * ব্রণ/পিমপল (Acne or pimples) * ত্বকের ক্ষত (Skin lesion) * চুল পড়ে যাওয়া (Too little hair) * ত্বকের বৃদ্ধি (Skin growth)
চিকিৎসা: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ রোগের নিরাময় করে থাকেন। রোগ নির্ণয়ের পর প্রথমে ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা করেন। প্রয়োজনে মাইনর সার্জারিও করা হয়।
সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের কারণে যেসব ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়: * পারকিনসন’স ডিজিজ ও বিষণ্নতার মতো স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগ। * শরীরের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। * অ্যালকোহলিক প্যানক্রিয়াটাইটিস ও নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবোরিক ডার্মাটাইটিস দেখা দিতে পারে। * কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিয়র। * শরীরের স্থূলতা বৃদ্ধিকারী এনডোক্রাইন ডিজিজ, যেমন- ডায়াবেটিস। * কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ গ্রহণ। * চুলকানি বা অন্য কোনো কারণে মুখমণ্ডলের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
প্রতিকারে করণীয়: চিকিৎসকের পরামর্শে খুশকিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। ১) পাইরিথিয়ন জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামযুক্ত শ্যাম্পু (প্রতিদিন) ২) অ্যান্টিফাংগাল কিটোকোনাজলযুক্ত শ্যাম্পু (সপ্তাহে দুইবার) ৩) সেলিসাইলিক এসিড শ্যাম্পু (প্রতিদিন) এই শ্যাম্পুগুলি কম মাত্রার সেবোরিক ডার্মাটাইটিস কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি এক ধরনের শ্যাম্পু কিছুদিন কাজ করার পর সেটির কার্যকারিতা কমে যায়, তাহলে আরেক ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ব্যবহার বিধিতে লিখিত সময় অনুসরণ করে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এই শ্যাম্পুগুলি মুখমণ্ডল, কান ও বুকে আলতোভাবে ঘষে পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ঘরোয়া যত্নগুলো * আক্রান্ত স্থানে অলিভ অয়েল প্রয়োগ করুন। ঘণ্টাখানেক জায়গাটিতে তেল থাকতে দিন। এরপর ব্রাশ বা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান এবং ধুয়ে ফেলুন। * নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন ও সাবান ব্যবহার করে মাথার ত্বক ও শরীর ধুয়ে ফেলুন। তবে অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। * করটিকয়েড ক্রিম ব্যবহার করুন, এটি কাজ না করলে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম কিটোকোনাজল ব্যবহার করুন। * অ্যালকোহলযুক্ত দ্রব্য পরিহার করতে হবে * সেবোরিক ডার্মাটাইটিস হলে নরম সুতি কাপড় পরিধান করুন, এ ধরনের কাপড় আপনার ত্বকের চারপাশে বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। এর ফলে চুলকানি কম হয়। * দাড়ি বা গোঁফের নিচে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তাই দাড়ি ও গোঁফ কাটলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের লক্ষণ প্রশমিত হয়। * চুলকানোর কারণে জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। চুলকানি থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পেতে হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। * চোখের পাতা লাল হলে বা সেখানে আঁশজাতীয় ভাব দেখা দিলে, প্রতিরাতে বেবি শ্যাম্পু দিয়ে চোখের পাতা ধুয়ে ফেলুন এবং আঁশগুলি তুলা দিয়ে তুলে ফেলুন। উষ্ণ পানিতে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়েও মোছা যেতে পারে। * শিশুর ক্রেডল ক্র্যাপ হলে শিশুর মাথার ত্বক বেবি শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করুন। শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলার আগে নরম ব্রাশ দিয়ে ডলে খুশকি তুলে ফেলুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা।