অধিকাংশ নারীই জীবনের কোনো না কোনো সময় স্তনে ব্যথা (Breast Pain) অনুভব করে থাকেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরীক্ষা মতে ৭০% নারী এই অসুবিধায় ভুগে থাকেন, যাকে মেডিকেলীয় ভাষায় বলা হয়ে থাকে ম্যাস্টালজিয়া। স্তনের এই ব্যথা সাধারণত স্তনের টিস্যু ও বগল (Axilla) থেকে হয়ে থাকে তবে অনেক ক্ষেত্রে তা বুকের পাজর থেকেও হতে পারে (Referred Pain)। সেক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা, ধরন ও স্থান ভিন্ন হতে পারে।
ব্যথার ধরন ও উপসর্গ : সাইকলিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া : এ ব্যথা মাসিকের সঙ্গে চক্রাকারে হয়ে থাকে। হরমোনাল পরিবর্তন এর প্রধান কারণ। উপসর্গ হিসেবে ব্যথার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে চাকা বা গুটি অনুভূত হয়। সাধারণত মহিলাদের মাসিকের আগে ব্যথা ও চাকাভাব বাড়ে এবং মাসিকের পর কমে যায়। কোনো ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র হয় এবং সবসময় থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে হাতেও ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত কম বয়স্ক মহিলারা এতে বেশি আক্রান্ত হন।
নন-সাইকলিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া : মাসিকের সঙ্গে এ ব্যথা সম্পর্কিত নয় এবং হরমোনাল পরিবর্তন একে প্রভাবিত করে না। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত বুকের পাজর থেকে অনুভূত হয়। ব্যথা সাধারণত এক পাশের স্তনে অথবা একটি নির্দিষ্ট স্থানে অনুভব হয় এবং ওই স্থানে চাপ প্রয়োগে তা বেড়ে যায়। ঋতুচক্র বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে এমন মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।
ব্যথার কারণসমূহ: ফাইব্রোসিস্টিক চেইঞ্জ : সাধারণত ২০-৫০ বছরের মহিলাদের এ পরিবর্তন বেশি হয়ে থাকে। স্তনে ব্যথা হওয়া, চাকাভাব অনুভূত হওয়া এবং ভারী ভাব এর অন্যতম লক্ষণ। অনেক ক্ষেত্রে/কারও কারও সঙ্গ রস নিঃস্বরণ হতে পারে।
কোস্টোকনড্রাইটিস (Costochondritis): ৪০ ঊর্ধ্ব নারীদের এ ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে এবং বুকের পাজরের তরুণাস্থি (Cartilage) প্রদাহ এর কারণ। স্তন থেকে উৎপত্তি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যথা স্তনে অনুভূত হতে পারে।
স্তনের অপারেশন : স্তনের পূর্ববর্তী অপারেশনের স্থানে অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে, যা সাধারণত নার্ভ Damage বা প্রদাহ এর জন্য হয়ে থাকে।
ওষুধ : যেসব ওষুধ সেবনে স্তনে ব্যথা হতে পারে- OCP/ জন্মনিন্ত্রণ বড়ি। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, এন্টি ডিপ্রেসেন্ট, এন্টি সাইকোটিক মিথাইলডোপা, ডাইউরেটিক্স ইত্যাদি।
ম্যাসটাইটিস : স্তনের টিস্যু ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে তাকে Mastitis বলা হয়। রোগী সাধারণত জ্বর এবং স্তনে ব্যথা, ফোলা ও চামড়াতে লাল হয়ে যাওয়া ও গরম অনুভব এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসেন। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক এবং আক্রান্ত স্থানে গরম সেক এর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই ব্রেস্ট পেইনের উপসর্গ কারণ নিয়ে সতর্ক হতে হবে।
লেখক: অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন,আল মানার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।