ক্যালসিয়াম নামের খনিজ উপাদানটি ব্যথা উপশমে খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত শক্ত করে, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। এ ছাড়া স্নায়ু, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও লাগে। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরাসিস রোগ হতে পারে। আমরা জানি হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রধানত প্রবীণদের বেশি হয়ে থাকে। আবার হরমোনজনিত কিছু তারতম্যের কারণে প্রবীণ নারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিছু অসুখের কারণে অনেক সময় তরুণেরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুরা হার ব্যথায় ভুগে থাকে। কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে। যেমন কিছু বাতজনিত সমস্যা।
সাধারণত শরীরের যে প্রয়োজনীয় বিষয় থাকে যেমন- ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, খনিজ বা মিনারেল ইত্যাদি। দেখা যায় প্রয়োজনীয় এই উপাদানগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে না পারলে অনেক আগেই শরীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে নিজে থেকে কখনো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এতে বেশ ক্ষতিও হতে পারে ।
প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাই এখানেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আর শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকলে কিন্তু ক্যালসিয়াম থেকে উপকার পাওয়া যাবে না। আবার অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। যাদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাদের চিকিৎসার পর অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে পুনরায় পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি হলে চলে। আর রজঃনিবৃতির (মেনোপজ) পর নারীদের এবং সত্তর ঊর্ধ্ব পুরুষদের ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয়। গর্ভবতী ও বুকের দুধ পান করান যে মায়েরা তাদের লাগে একটু বেশি প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম গ্রহণের সময় ভিটামিন ডি-ও খেতে হবে। কেননা এটি শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো মুড়ি-মুড়কির মতো ক্যালসিয়াম খেতে নেই। কেননা, এসব কিন্তু আমরা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেয়েও এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি। যা সহজলভ্য ও শরীরের জন্য অনেকটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত।
ক্যালসিয়ামের উৎস
ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে এবং দুধ জাতীয় খাবার থেকে আসে ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, বাদাম, টফু, কমলা ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ছাড়াও আমরা দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি খাবার থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে পারি। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম আছে ৯৫০ মিলিগ্রাম, একই পরিমাণ পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, সামুদ্রিক মাছে ৩৭২ মিলিগ্রাম, শজনেপাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম, ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম। এককাপ টক দইয়ে থাকে আরও বেশি ৪০০ মিলিগ্রামের মতো। আধাবাটি রান্না করা সবুজপাতা আছে এমন শাক খেলে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া হবে। এক গ্লাাস কমলার রসে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তবে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয় কিছু জিনিস, যেগুলো ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো।
যেমন উচ্চমাত্রার চর্বি ও অক্সালিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার। চকলেট, পালংশাক, কার্বোনেটযুক্ত পানীয় ইত্যাদিও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। কিন্তু ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন এ, সি এবং ডি। আয়রনও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারও ক্যালসিয়ামের কাজে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশকিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশিমাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।
লেখক: জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর