রোগের কারণ : যারা বারবার টনসিলের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এ রোগের চিকিৎসায় চরম অবহেলা করে থাকেন, তারা পেরিটনসিলার অ্যাবসেস রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
যাদের বেশি হয়ে থাকে : এ রোগটি সাধারণত বড়দের ক্ষেত্রেই বেশি হয়ে থাকে, শিশুদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ : এ রোগের ক্ষেত্রে গলায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। খাবার খেতে চরম কষ্ট হয়। জ্বর হয়ে থাকে ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢোক গিলতেও ভীষণ কষ্ট হয়ে থাকে। ঢোক গিলতে না পারার কারণে মুখে লালা জমে ঠোঁটের কোণ থেকে লালা নিঃসরণ হতে থাকে। কথা বলতে ভীষণ অসুবিধা হয়। মুখ থেকে বের হয় চরম দুর্গন্ধ। এটা সাধারণত গলার একদিকে হয়ে থাকে। তবে দুদিকেই হতে পারে।
পরীক্ষায় যা পাওয়া যায় : হাঁ করে মুখগহ্বর দেখলে দেখা যায়, গলার এক পাশে অর্থাৎ টনসিলের সামনের অংশ লালচে ও ফুলে থাকে। আলজিহ্বা ফুলে অপরদিকে সরে থাকে। রোগী তীব্র ব্যথায় হা করতে পারেন না। তাই যন্ত্র দিয়ে জিহ্বা নামিয়ে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গলায় লসিকা গ্রন্থি আকারে বড় অবস্থায় পাওয়া যায়।
রোগের চিকিৎসা : এ রোগে অবহেলা ও সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ থাকে না। কারণ রোগী তীব্র ব্যথায় দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনো খাবারই ঠিকঠাক মতো চিবিয়ে খেতে পারে না। তাই জরুরিভিত্তিতে রোগীকে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে শরণাপন্ন হতে হয়। প্রয়োজনবোধে হাসপাতালে ভর্তি থাকার মতো অবস্থা দাঁড়ায়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
এ রোগ ওষুধের মাধ্যমে ভালো হয় না। সার্জারি করার মাধ্যমে গলার ফোলা অংশের পুঁজ বের করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ে থাকে। আর তা যথাযথভাবে করা সম্ভব হলে কেবল তখনই রোগী তীব্র ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়ে যান। সার্জারিপরবর্তী সময়ে রোগীকে হাইড্রোজেন পারওক্সাইড দিয়ে গড়গড়া ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হয়। খাবারের ক্ষেত্রে ১৪ দিন কোনো ধরনের শক্ত, ঝাল ও গরম খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়ে থাকে।
রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটির সময় উপদেশ দেওয়া হয় যে, সুস্থ হওয়ার পর অন্তত ৬ সপ্তাহের মধ্যে যে অপারেশন করিয়ে টনসিল ফেলে দেয়। কারণ টনসিল ফেলে না দিলে নতুন করে এই রোগটি আবার দেখা দিতে পারে। পেরিটনসিলার অ্যাবসেসের ক্ষেত্রে তাই সতর্ক থাকা খুব জরুরি। রোগের উপসর্গ দেখা দিলে নাক কান গলাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা এবং সেই মতাবেক চলা উত্তম।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল