অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ: নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি প্রদাহজনিত রোগ। নিউমোনিয়া এমন একটি রোগ যা একটি জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে এবং সে জীবাণু যদি ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল বা সেনসেটিভ হয়ে থাকে তবে সেই জীবাণুর মৃত্যুর সুফলে নিউমোনিয়া ভালো হয়ে যাবে। এমন অনেক রোগী আছেন যারা কোনো না কোনোভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত এবং অনেক নামি-দামি এন্টিবায়োটিক অনেক দিন ধরে ব্যবহার করার পরও নিউমোনিয়া সারছে না। এখন প্রশ্ন কেন এবং কখন নিউমোনিয়া সারতে চায় না?
উল্লেখ করা হয়েছে, নিউমোনিয়া একটি জীবাণু ঘটিত রোগ, যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসসহ বিভিন্ন ছোট বড় এমনকি অখ্যাত জীবাণু দিয়ে এই নিউমোনিয়া হতে পারে। যদি কোনো বিশেষ জীবাণু দিয়ে এই রোগটি হয়, সেটা ঠিকমতো চিহ্নিত করা না গেলে শত এন্টিবায়োটিকের পর এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও সারবে না। তাই আক্রমণকারীর পরিচয় উদঘাটন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
এ ব্যাপারে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ঠিকমতো জীবাণুর পরিচয় জানতে হবে এবং সেই জীবাণু কোনো এন্টিবায়োটিকে নিশ্চিহ্ন হয় সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখতে হবে। নিউমোনিয়া যক্ষ্মা জীবাণু দিয়েও হতে পারে। যদি আমরা টের না পাই যে রোগটি যক্ষ্মা, তাহলে তো আর রক্ষা নেই। হাজারো ওষুধ দিয়েও রোগ সারবে না। যক্ষ্মার ঠিক মতো ওষুধটি প্রয়োগ করলেই জ্বর, কাশি, বুক ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
অনেক রোগীই আছেন, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের দেখা যায়, নিউমোনিয়া সারছে না। এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে হয়তো কিছুটা কমল আবার দেখা গেল কয়েক দিন পর এক্সরে জুড়ে ছেয়ে গেছে নিউমোনিয়া নামক মেঘের মতো সাদা ছায়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যাবে, এদের মধ্যে অনেকেই ধূমপায়ী। আসলে ক্যান্সারজনিত টিউমারটি ফুসফুসের শ্বাসনালীকে চেপে চেপে সরু করে ফেলে। ফলে সেই টিউমারের নিচের অংশে অবিরাম নিউমোনিয়া লেগেই থাকে। অনেক সময় শ্বাসনালীতে বাইরের কোনো পদার্থ ঢুকে গেলে ধীরে ধীরে সেই পদার্থের নিচের অংশের প্রদাহের মাধ্যমে নিউমোনিয়া লেগেই থাকে।
যতক্ষণ পর্যন্ত সেই পদার্থটিকে ব্রঙ্কোস্কপে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সারানো না যায় ততক্ষণ নিউমোনিয়া সারবে না। বিশেষ করে বার্ধক্য-ডায়াবেটিস, পুষ্টিহীনতা, ক্যান্সারে যারা ভুগছেন তারা বহুদিন ওষুধ সেবন করছেন। এ ছাড়া দেখা যায় যে, বহুদিন ধরে স্টেরয়েড সেবনকারী যারা তাদের মধ্যেও মাঝে মাঝে বা বিরতিহীনভাবে ফুসফুসে নিউমোনিয়া চলতে থাকে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক: বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।