থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্তরোগ। এটি জিনবাহিত অসুখ। মানুষের দেহের কোষে অবস্থিত জিনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পরিবাহিত হয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে।
এটি একটি বিশেষ ধরনের রঞ্জক পদার্থ। শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করা এর প্রধান কাজ। জিনগত কারণে এই হিমোগ্লোবিনের গঠনে বা তৈরি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিলে এর উৎপাদন ব্যাহত হয়। ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের কারণে লোহিত কণিকার উৎপাদনের গতি হ্রাস পায়, আয়ুষ্কাল কমে যায় এবং লোহিত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায়। এ অবস্থায় শরীরে রক্তস্বল্পতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। পাশাপাশি দেখা দেয় আরো কিছু উপসর্গ। এটাই হলো থ্যালাসেমিয়া।
উপসর্গ
ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ততা, শ্বাসকষ্ট, ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হলো থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ। রক্ত অধিক হারে ভেঙে যায় বলে জন্ডিস হয়। প্রস্রাবও হলুদ হতে পারে। প্লীহা বড় হয়ে যায়। যকৃতও বড় হয়ে যেতে পারে। অস্থি পাতলা হয়ে যেতে থাকে। চেহারার বিশেষ পরিবর্তন হয়। নাকের হাড় দেবে যায়। মুখের গড়ন হয় চীনাদের মতো। একে বলে ‘মঙ্গোলয়েড ফেস’। শরীরের বৃদ্ধি কমে যায়। ধীরে ধীরে দেখা দেয় বিশেষ কিছু জটিলতা।
থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করার সবচেয়ে চালু পদ্ধতিটি হলো রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা। রক্তের রুটিন পরীক্ষা (সিবিসি) থেকে থ্যালাসেমিয়ার সম্ভাবনা আঁচ করা যায়। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা করেও এই রোগ ধরা যায়।
চিকিৎসা
রক্ত পরিসঞ্চালনই থ্যালাসেমিয়ার মূল চিকিৎসা। আয়রন বেড়ে গেলে আয়রন চিলেশনের ওষুধ দিয়ে তা কমাতে হয়। প্লীহা অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে অপারেশন করে প্লীহা কেটে ফেলতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কমে আসে। মূলত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো এর স্থায়ী চিকিৎসা। জিনথেরাপিও এই রোগের আরেকটি উন্নত চিকিৎসা।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা খুব জরুরি। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া অনেকখানি কমানো যেতে পারে। দুজন ক্যারিয়ারের মধ্যে যেন বিয়ে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পারলে থ্যালাসেমিয়া কমানো সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল