ডা. আহসানুল হক আমিন: থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় আয়োডিন থেকে। তাই এর অভাবে নানা রকম থাইরয়েডজনিত সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া দুটোই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। এ ছাড়া এর ভেতরে গুটি বা নডিউল তৈরি হওয়া এবং থাইরয়েডের টিউমার অথবা ক্যান্সার হতে পারে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড রোগের লক্ষণগুলো দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে–হাইপার থাইরয়েডিজম ও হাইপো থাইরয়েড। থাইরয়েড গ্রন্থিতে হরমোন বেড়ে যাওয়ার অবস্থাকে বলে হাইপার থাইরয়েডিজম।
গলার সামনের দিকে মাঝামাঝি স্থানে কোনো ধরনের ফোলা ভাব, অতিরিক্ত অস্থিরতা, ঘুম কম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, অতিরিক্ত ঘাম, ওজন কমে যাওয়া, নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সমস্যা ও গর্ভধারণের জটিলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে বুঝতে হবে হাইপার থাইরয়েডিজমের ঝুঁকি রয়েছে।
অন্যদিকে, থাইরয়েড গ্রন্থিতে হরমোন কমে যাওয়ার অবস্থাকে বলে হাইপো থাইরয়েড। গলার সামনের দিকে মাঝামাঝি স্থানে কোনো ধরনের ফোলা ভাব, ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, মানসিক অবসন্নতা, চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, চুল পড়া, কণ্ঠস্বর মোটা ও কর্কশ হয়ে যাওয়া, অকারণে শীত অনুভূত হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, নারীদের মাসিকের সমস্যা ও গর্ভধারণের জটিলতা ইত্যাদি উপসর্গ হাইপো থাইরয়েডের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
থাইরয়েড রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া জটিল কিছু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ, থাইরয়েড অ্যান্টিবডি নির্ণয়, রেডিও আয়োডিন, আপডেট ও স্ক্যান এবং আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার-আয়তন, নডিউলের এফএনএসি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়।
থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। হাইপো থাইরয়েড হলে ওষুধের মাধ্যমে খুব সহজেই এর চিকিৎসা করা যায়। অন্যদিকে, তেজস্ক্রিয় আয়োডিন, অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ, বিটা ব্লকার এবং সার্জারি (থাইরয়েডেক্টমি) হাইপার থাইরয়েডিজমের সাধারণ চিকিৎসা।
উভয় ক্ষেত্রেই ওষুধ কত দিন খেতে হবে, তা নির্ভর করে রোগের অবস্থা (থাইরক্সিন ঘাটতি, উপসর্গ) ধরনের ওপর। অনেকে ওষুধ ছাড়াও সুস্থ থাকে।
সার্জারির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর কিছু অংশ অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়। অপারেশন করে গ্রন্থি অপসারণের পরও অনেক কোষ রয়ে যায়। সেগুলো ধ্বংস করার জন্য রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিনের প্রয়োজন হতে পারে।
যাদের একেবারেই থাইরক্সিন নিঃসৃত হয় না বা যাদের সার্জারির মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে বাদ দিতে হয়েছে বা অটোইমিউন ডিজিজ আছে, তাদের সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় এবং কয়েক মাস অন্তর একবার রক্তে টি-ফোর ও টিএসএইচ পরীক্ষা করাতে হয়।