ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি অঙ্গ যেমন : মস্তিষ্ক, চোখ, হার্ট, কিডনি, পা—সব জায়গায় ক্ষতি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা যে জিনিসটি বেশি ভয় পায়, তা হলো কিডনি বিকল হওয়া। আর কিডনি বিকল মানে বাকিটা জীবন ডায়ালিসিস করে যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগী ডায়াবেটিস থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।
কিডনি বিকল হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিস। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী কিডনি বিকলের দিকে যায়। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীর কিডনি বিকল হতে পারে।
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায় : লক্ষণ নাও থাকতে পারে। পরীক্ষা করালে ধরা পড়ে।
পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ—
♦ ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না থাকা
♦ প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাওয়া
♦ পা, চোখ, হাত ফুলে যাওয়া
♦ ইনসুলিনের ডোজ বা ডায়াবেটিসের ওষুধ কম লাগে
♦ শ্বাসকষ্ট
♦ খাবারের রুচি কমে যাওয়া
♦ বমি বমি ভাব
♦ শরীর চুলকানো
♦ দুর্বল লাগা
♦ রক্তশূন্যতা বা শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
♦ যাদের অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস।
♦ যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত।
♦ যারা ধূমপান করে।
♦ যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে আছে উচ্চ রক্তচাপ।
♦ যাদের বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়।
♦ প্রস্রাবের রাস্তায় সমস্যা।
♦ যারা কিডনির জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ খায়। যেমন : ব্যথার ওষুধ।
♦ যাদের হৃিপণ্ডের সমস্যা আছে।
♦ যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে স্ট্রোক বা রেটিনোপ্যাথি আছে।
♦ বংশগত কারণ।
প্রতিরোধের উপায়
♦ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, গত তিন মাসের ডায়াবেটিসের গড় ৭ শতাংশের মধ্যে রাখা।
♦ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ১৪০/৯০-এর কম রক্তচাপ রাখা।
♦ ধূমপান পরিহার করা।
♦ প্রস্রাবে ইনফেকশন যেন না হয় সে জন্য পারসোনাল হাইজিন বজায় রাখা।
♦ তিন মাস পর পর ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
♦ যাদের ওজন বেশি, ওজন কমানোর চেষ্টা করা।
♦ রক্তে চর্বি বেশি থাকলে তা কমানোর জন্য ওষুধ খাওয়া।
রোগ নির্ণয়
ডায়াবেটিস থেকে কিডনি রোগ হলে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাবে। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন বা বিইউএন, সেরাম ক্রিয়েটিনিন, ইউরিন অ্যালবুমিন রেশিও এবং ইজিএফআর পরীক্ষা করাতে পারেন।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম
কনসালট্যান্ট
ডা. সিরাজুল ইসলাম
মেডিক্যাল কলেজ