ক্যান্সার মানুষের জীবনে এক বিভীষিকার নাম। অন্যান্য অঙ্গের মতো কিডনিরও ক্যান্সার হয়। কিডনি ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কিডনি ক্যান্সার জটিল ও প্রাণনাশী হলেও দ্রুত ডায়াগনসিস করা গেলে এর পরিপূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব।
কারণ
কিডনি ক্যান্সারের কোনো ধরাবাধা কারণ পাওয়া যায় না। তবে কিছু বিষয় আছে, যা কিডনি ক্যান্সার ত্বরান্বিত করে।
বয়স্ক রোগী : যাঁদের বয়স ৫৫-৭৫ বছর, তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
ধূমপান : অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপানকারীদের কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেশি।
ক্যান্সারের ইতিহাস : যাদের পরিবারের সদস্যদের কিডনি ক্যান্সারের ইতিহাস আছে।
উচ্চ রক্তচাপ : দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
অতিরিক্ত শারীরিক স্থূলতা : মানুষের কায়িক পরিশ্রমের অভাবে স্থূলতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি।
কিডনি সিস্ট : যাঁদের কিডনি সিস্ট থাকে, বিশেষ করে যাঁরা ডায়ালিসিস নিচ্ছেন, তাঁদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
জন্মগত রোগ : কিছু জন্মগত রোগ, যেমন : ‘ভন হিপেল লিন্ডাও ডিজিজ’ কিডনি ক্যান্সারের কারণ।
লক্ষ্মণ
♦ প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, যা লাল বা কালচে হতে পারে
♦ পেটের পাশে বা কোমরের সাইডে বড় চাকার মতো হয়ে যাওয়া। কোমরের নিচের দিকে এক পাশে ব্যথা হওয়া
♦ ক্ষুধামন্দা
♦ কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ওজন অনেক কমে যাওয়া
♦ জ্বর ও রাত্রিকালীন ঘাম
♦ দুর্বলতা
♦ উচ্চ রক্তচাপ
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এম আর আই, বোন স্ক্যান ও বায়োপসির মাধ্যমে কিডনির ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। এর চিকিৎসা সাধারণত টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুরু হয়। যে ক্যান্সার শুধু কিডনিতেই সীমাবদ্ধ, সে ক্যান্সারের জন্য সার্জারিই একমাত্র চিকিৎসা। ক্যান্সার কিডনির বাইরে ছড়িয়ে পড়লে, ক্যান্সারের স্টেজিং করে অতিরিক্ত চিকিৎসার সুপারিশ করা যেতে পারে।
সার্জারি : অপারেশন করে কিডনির কিছু অংশ বা পুরো কিডনি অপসারণ করা।
ক্রায়োসার্জারি ও রেডিওএব্লেশন : ক্রায়ো দিয়ে অতিরিক্ত শীতল করে বা রেডিওএব্লেশন করে তাপ প্রয়োগ করে টিউমার ধ্বংস করা যায়।
কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি : প্রয়োজনে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দিতে হতে পারে।
কিডনি ক্যান্সার অন্যান্য ক্যান্সারের মতো জটিল হলেও নিয়ম মেনে যেমন এটার ঝুঁকি কমানো যায়, তেমনি লক্ষণ খেয়াল করে দ্রুত ডায়াগনসিস করতে পারলে পরিপূর্ণ চিকিৎসাও সম্ভব। তাই সবার সচেতন হওয়া খুব জরুরি।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মো. মনিরুল ইসলাম
রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ,
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।