ডা. নূরুন নাহার (মহুয়া): হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মস্তিষ্কের পরই হৃৎপিণ্ডের স্থান। হৃদযন্ত্র মানবদেহের জন্য অনেক জরুরি কাজ করে থাকে। বিশ্বের সমগ্র জনগোষ্ঠীর ১.৭২ শতাংশ বা ১২৬ মিলিয়ন ‘ইসকেমিক হার্ট ডিজিস’ বা হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন-স্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত। হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য হলেই হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন-স্বল্পতা রোগ হয়। হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ বা বাধাপ্রাপ্ত হলে রক্তনালির সংকোচন বা ব্লক কমপক্ষে ৭০ শতাংশ হলেই হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে রক্ত তথা অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। অক্সিজেন-স্বল্পতার প্রাথমিক অবস্থা হচ্ছে ইসকেমিয়া বা অ্যানজাইনা। আর তীব্র বা প্রকট অবস্থা হচ্ছে ইনফারকশন বা হার্ট অ্যাটাক।
হৃৎপিণ্ডের কাজ : হৃৎপিণ্ড কাজ হলো দেহের প্রতিটি কোষে খাদ্যকণা পৌঁছে দেওয়া। ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন কোষে কোষে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। বিশুদ্ধকরণের জন্য কোষ থেকে দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে পৌঁছে দেয়। দেহের তাপমাত্রা ও শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । হৃৎপিণ্ড নিজেই নিজেকে দুটি রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে থাকে। এ দুইটি রক্তনালির কমপক্ষে একটি আংশিক বা পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেলেই সমস্যা হয়।
যারা ঝুঁকিতে : নারী বা পুরুষের অতিরিক্ত স্থূলতা, খাবারে অনিয়ম, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অত্যধিক চর্বি, পরিশ্রমহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস এ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
লক্ষণ : বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকচাপ, বুক ভারি, ঘাড়ব্যথা, চেয়ালব্যথা ছাড়াও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা : বুকে ব্যথাই এ রোগের আভাস দেয়। হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন স্বল্পতা ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বিশ্রাম বা জিহ্বার নিচে নাইট্রেট স্প্রে বা ট্যাবলেট দিলেই বুকের ব্যথা কমে যায়। কিন্তু জটিল পর্যায়ে বিশ্রাম এবং নাইট্রেট জিহ্বার নিচে ব্যবহার করেও বুকে ব্যথা কমানো যায় না। আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এর ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছার ব্যবস্থা করতে হবে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রোগীর অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসা দেবেন।
প্রতিকার : রুটিন মাফিক জীবনযাপন ও প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে। বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে। গিলা, কলিজা, গরু ও খাসির মাংস খাওয়া বাদ দিতে হবে। তেল, চর্বি, মিষ্টি কম খেতে হবে। ধূমপান ও জর্দা খাওয়া বাদ দিতে হবে। পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুমাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। উত্তেজনা তৈরি হয়- এমন কাজ থেকে বিরত থাকা খুব জরুরি। আলগা লবণ খাওয়া যাবে না। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, জরুরি হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন-স্বল্পতা চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সহজ ও নিরাপদ।
লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক
কার্ডিওলজি বিভাগ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মিরপুর, ঢাকা
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা