ক্যান্সার বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোন চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ক্যান্সার নিয়ে আশঙ্কার বদলে সচেতনতা প্রসার বেশি জরুরি।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। সারা বিশ্বে এই রোগের থাবা রয়েছে। উন্নত-আধুনিক দেশ থেকে পিছিয়ে পড়া কোনও দেশই এর বাইরে নয়। তথ্য বলছে, বিশ্বে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সচেতনতা (Awareness) এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা (Lifestyle) এই দুই অস্ত্রেই একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মারণরোগ। ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সবস্তরের লোকজন, রোগী-রোগীর পরিবার, চিকিৎসক, সাপোর্ট গ্রুপ, প্রশাসন- সবাইকে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হয়। ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪- এই তিন বছরের জন্য দিবসটির একই থিম রাখা হয়েছে Close The Care Gap অর্থাৎ ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় ঘাটতি কমাই।’
২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন শুরু হয়। ফ্রান্সের প্যারিসে World Summit Against Cancer-এর মঞ্চ থেকে এটা শুরু হয়। Union for International Cancer Control-এর তরফে এর আয়োজন হয়েছিলো।
এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যু প্রতি বছর দেড় লাখ। দিন দিন এ হার আরও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যান্সার প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেন বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই।
এই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বলেন, খুসখুসে কাশি হওয়া, গলার স্বর বসে যাওয়া, খাওয়ার সময় খাবার আটকে গিলতে সমস্যা হওয়া, অস্বাভাবিক ভাবে বুক জ্বালাপোড়া করা, শরীরের কোথাও চাকা চাকা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হওয়া (মেয়েদের নিয়মিত ঋতুস্রাব ছাড়া সব রক্তক্ষরণই অস্বাভাবিক) এমন কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন ক্যান্সার আছে কি না।
ডা. হাই বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আমাদের মতো দরিদ্র দেশের মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়তে হয়। অনেকে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করেও ক্যান্সারের চিকিৎসা চালিয়ে যান। এখন প্রয়োজন ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা। তবে ক্যান্সারের ব্যয় কমানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন সমন্বয়। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সম্ভব ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি বিভাগে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি সফলভাবে করা গেলে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে যাবে সহজে। কিন্তু এ জন্য বেশি প্রয়োজন পড়বে দক্ষ জনবলের। ক্যান্সারের জন্য যেমন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন নার্সেরও।
ডা. এম এ হাই বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতার। তবে এ সচেতনতা শুধু ব্যক্তিগত না থেকে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তবেই সম্ভব ক্যান্সারের মতো রোগ জয় করা।
দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ ক্যান্সার ফাউন্ডেশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে শোভাযাত্রা, ক্যান্সারবিষয়ক পোস্টার ও ফেস্টুন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, ক্যান্সার রোগী ও সারভাইবারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম।