রোগটির পুরো নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (অঝউ)। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যার নামই অটিজম। রোগটি অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, যা তিন বছর বয়স হওয়ার আগেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। সাধারণত অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সামাজিক যোগাযোগে অত্যন্ত দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সক্ষমতাও কম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা থেকে এদের শনাক্ত করা যায়। এই রোগের কারণ সর্ম্পকে এখনো কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে জেনেটিক কারণে এটি হয় বলে প্রমাণ রয়েছে। অটিজম জিনগত ও পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণের সঙ্গে জড়িত বলে গবেষকরা প্রমাণ করেছেন।
এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুর আচরণে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত প্রথমে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে শুরু করেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। রোগ নির্ণয়ে মূলত শিশুর সম্পূর্ণ আচরণের ইতিহাস এবং স্নায়ুতাত্ত্বিক গণনার হিসাব বিবেচনা করা হয়। আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ রোগের ক্ষেত্রে একে জীবনযাপনের একটি বিশেষত্ব মনে করে চিকিৎসা করাই ভালো। অটিজম বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে প্রকাশ পেয়ে থাকে। আধুনিক গবেষকদের গবেষণায় উঠে এসেছেন যে, প্রতিহাজারে ১ থেকে ৩ জন অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে- এমন রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের পর থেকে এনড্রয়েড ফোন ব্যাপকভাবে শিশুদের ব্যবহার অটিজমকে ত্বরাণ্নিত করেছে। তবে উন্নত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অটিজম চিহ্নিত হওয়ার কারণ হতে পারে।
অটিজমের লক্ষণ : সাধারণ কিছু কথা বারবার বলা। কোনো কিছু ছোটখাটো জিনিসের জন্য প্রচণ্ড চিৎকার করে কাঁদা। প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা। ব্যথা বা শারীরিক আঘাতের বোধ কম হওয়া। বেশি আলো সহ্য করতে না পারা। লোকজনের তীব্র হুল্লোড়ে অস্বস্তি। কোনো জিনিস নিচু থেকে তোলার সময়ে অসুবিধা। মুখের পেশির ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা। মুখভঙ্গি নিয়ন্ত্রণে অপারগতা। প্রচণ্ড মেজাজ দেখানো ইত্যাদি। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সারাক্ষণ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সর্বদা কল্পনার এক অবাস্তব জগতে ডুবে থাকে তারা। নানা রকমের কাল্পনিক শব্দ শোনে, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে। কিছু বিষয় তারা খুবই পছন্দ করে এবং দিনরাত সেগুলো নিয়েই পড়ে থাকে। আবার কিছু বিষয়ে তারা খুব ভয় পায়, সহ্য করতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিচার-বুদ্ধির কোনো উন্নতি হয় না।
চিকিৎসা : আক্রান্ত শিশুকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করাতে হবে। বাবা-মা, পরিবারের মানুষ, এমনকি আত্মীয়-স্বজন মিলে শিশুটিকে কাউন্সিলিং করে যেতে হবে। অটিজম সমস্যায় হতাশ বা অধৈর্য না হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা করাতে হবে।
লেখক : অটিজম গবেষক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট