English

25 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

ঠিকমতো হাত না ধোয়া অনেক রোগের কারণ

- Advertisements -
Advertisements

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ: যদি প্রশ্ন করা হয়, জীবাণুর হাত থেকে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনটি? অনেকে সাত পাঁচ ভেবে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করবেন। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা অনেকে টিকার কথা বলে উঠবেন। কিন্তু যে কোনো টিকার চেয়ে বড় এবং মোক্ষম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে হস্ত ধৌতকরণ। সারাবিশ্বে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হলো– উদরাময় এবং শ্বাসনালির প্রদাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ দুটি রোগ দুই-তৃতীয়াংশ শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী। গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে, শুধু হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে উদরাময় অর্ধেক পরিমাণ কমে যাবে আর শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমবে এক-তৃতীয়াংশ।

জীবাণু কোথায়: সর্বত্রই জীবাণুর রাজত্ব। ঘরের ভেতরে-বাইরে জীবাণু। ধুলাবালিতে জীবাণু। এমনকি আপনার মানিব্যাগের মূল্যবান টাকার মাঝেও কিলবিল করছে জীবাণু। একমুঠো মাটিতে সারা বাংলার জনসংখ্যার চেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান। সুতরাং এসবের সঙ্গে হাতকে মিলিয়ে নিয়ে যদি আবার মুখে পুরে দেন, তবে তা কত ভয়ানক হতে পারে ব্যাপারটি অনুমান করুন। হাত দিয়ে ছড়ায় যে ব্যাধি: সাধারণ সর্দি, ফ্লু, উদরাময় থেকে শুরু করে পেটের পীড়াজনিত মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা, ই-কলাই সব ছড়ায় হাতের মাধ্যমে। এ ছাড়া হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ই, চামড়ার প্রদাহ, ট্রাকোমার মতো ভয়ানক চোখের রোগ ছড়ায় নোংরা হাত আর খাবার থেকেই। মেনিনজাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ ছড়াতে হাতের ভূমিকা অনন্য। আতঙ্ক ছড়ানো ভাইরাস সোয়াইন ফ্লু, কভিড-১৯ কিংবা ইবোলা ছড়ানোতে হাতের ভূমিকা রয়েছে। এসব থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া।

কখন হাত ধুবেন : খাবার গ্রহণের আগে হাত ধুতে হবে। অনেকগুলো কাজের শেষে অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে ভালো করে। যেমন ধরুন পায়খানা সেরে বেরিয়েছেন, তখন আপনার হাতে জীবাণুদের এক চমৎকার নর্তন-কুর্দন চলছে। নখের ঘেরা টোপে ঘর বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছে জীবাণু। এ অবস্থায় প্রথম কাজটি হলো, হাত পরিষ্কার করে সাবান ঘষে ধুয়ে ফেলা। বাচ্চাদের পায়খানা পরিষ্কার করে কিংবা ডায়াপার বদল করে একই কাজ করতে হবে আপনাকে। এ ছাড়া গৃহপালিত পশুপাখি পরিচর্যা শেষে, নাক ঝেড়ে সর্দি পরিষ্কার করার পর, হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ আটকে রাখার পর হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক। খাদ্য তৈরি করার আগে হাত ধৌত না করলে টাইফয়েড ম্যারির মতো আপনিও ছড়াতে থাকবেন জীবাণু। তাছাড়া খাদ্য প্রস্তুতি শেষে হাত ধুতে হবে ভালোমতো। বিশেষত যদি হয় মাছ কিংবা মাংস প্রস্তুতি। আপনার কন্টাক্ট লেন্স লাগানোর আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নেবেন। গণবিশ্রামাগারে সময় কাটানোর পর হাত না ধুয়ে জীবাণুর সঙ্গে বাস করতে চাইলে অবশ্যই ভিন্ন কথা।

কীভাবে প্রবেশ করে জীবাণু: জীবাণু শুধু খাবার পথে প্রবেশ করছে ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। হাতের আঙুল চোখে-নাকে লেগে যায় প্রায়ই। চেতন-অচেতন মনে আমরা চোখ-নাকের সঙ্গে হাতের মিলন ঘটায় কতবার কে জানে। এভাবে হাতের জীবাণু মুখ ছাড়াও পাচার হয়ে নাসারন্ধ্রে আর চোখের ভেতরে। বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও মারাত্মক। তারা ময়লা ধরে মুখে হাত তো পুরছেই, এর পাশাপাশি হাত মিলছে দেহের যত্রতত্র এমন গুপ্ত অঙ্গে। এভাবে পরিবেশের জীবাণু দেহের কুঠুরি দিয়ে প্রবেশ করছে অন্দরমহলে আর আমাদের টেনে নিচ্ছে রোগব্যাধির জগতে।

হাত কীভাবে ধুবেন: শুধু পানি দিয়ে কোনোমতে হাত ভিজিয়ে নেওয়ার নাম হাত ধোয়া নয়। হাত ধোয়ার জন্য একটু গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। সাবান মাখিয়ে কবজির ওপর পর্যন্ত ঘষতে হবে ২০ সেকেন্ড। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালো করে খিলাল করতে হবে এবং শেষমেশ পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে হবে। পরিষ্কার তোয়ালে, টিস্যু-কাগজ ব্যবহার করতে পারবেন ভেজা হাত মোছার জন্য। অভ্যাস গড়ুন ছোটবেলা থেকে: হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। মা-বাবা, পরিবারের বড়রাই পারেন এমন সুন্দর একটি রোগ প্রতিরোধক দেয়াল গড়ায় শিক্ষা দিতে। সবাই মিলে যদি এমন প্রতিরোধ দেয়াল গড়ে তুলতে না পারি, তবে জীবাণুর সহজ শিকার হতে কোনো বাধাই থাকবে না। চলুন না আজই শুরু করে সহজ কাজটি। সবাই গড়ে তুলি হাত ধোয়ার সুন্দর অভ্যাস আর জীবাণুকে করি বোল্ড আউট।

[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও ক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ]

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন