নাসিম রুমি: সময় কত দ্রুত চলে যায়। যেন কয়েক দিন আগের কথা, গ্যালারিতে বসে আর্জেন্টিনার খেলা দেখছেন আর নিজের আবেগ-অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু তিনিই কিনা নেই আজ তিন বছর হয়ে গেল! ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে অন্যলোকে পাড়ি জমান সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনার চিরবিদায়ের পর পৃথিবীতে বদল এসেছে অনেক। করোনা ভাইরাসের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে বিশ্ব। তার দেশ আর্জেন্টিনা দীর্ঘদিনের ট্রফিখরা ঘুচিয়েছে, তিন যুগ পর ঘরে তুলেছে বিশ্বকাপের শিরোপা। তারই একসময়ের শিষ্য লিওনেল মেসি জিতেছেন অষ্টম ব্যালন ডি অর। না থেকেও এসবের সবখানেই ছিলেন ম্যারাডোনা। নিজের সবশেষ ব্যালন ডি অর পুরস্কারটি যেমন কিংবদন্তিকে উৎসর্গ করেছেন মেসি।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সের প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন আর্জেন্টাইন এই জাদুকর। সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটাই জীবনের বেশিরভাগ সময় বিশ্বকে মোহিত করেছেন তার জাদুকরী ফুটবল দিয়ে। মাত্র দুই দশকের পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনা খেলেছেন ছয়টি ক্লাবে। ষোল বছর বয়সে পা রাখার আগেই নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে তার। এরপর ইউরোপে সেভিয়া, বার্সেলোনার মত ক্লাবে খেলেছেন। আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্সের হয়ে উপহার দিয়েছেন অজস্র সোনালী মুহূর্তের।
ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা ম্যারাডোনা পার করেছেন ইতালির নেপলস শহরে। সেখানকার ক্লাব নাপোলিকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। নেপলসে ম্যারাডোনার জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা ছিল তার নমুনা দেখা গিয়েছিল ১৯৯০ এর বিশ্বকাপে। সেবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ভেন্যু নেপলস। কিন্তু সেদিন শহরের মানুষ নিজের দেশকে বাদ দিয়ে গলা ফাটিয়েছিল আর্জেন্টিনার জন্য। কারণটা সেই ম্যারাডোনা। আজও এই শহরে ডিয়েগো নামটা উচ্চারিত হয় ঈশ্বরের সমান শ্রদ্ধা আর সম্মান দিয়ে।
৯০ এর বিশ্বকাপ অবশ্য জেতা হয়নি ম্যারাডোনার। জিতেছিলেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপ। ওই এক বিশ্বকাপ দিয়েই হয়ত আজীবন স্মরণ করা যায় ম্যারাডোনাকে। ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত দুই গোল করেছিলেন ওই এক আসরে, কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে করেছিলেন ‘হ্যান্ড অভ গড’ আর ‘গোল অভ দ্য সেঞ্চুরি’র মত দুই গোল। প্রথমটা যতখানি নিন্দিত, পরেরটা ঠিক ততখানিই নন্দিত।
সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের মৃত্যুর আজ তিন বছর। এত দিন পরেও ফুটবল বিশ্বে প্রতিনিয়ত শোনা যায় ম্যারাডোনার নাম।