দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গত বছরের আগ পর্যন্ত লিওনেল মেসির বড় একটা আক্ষেপ ছিল আর্জেন্টিনার হয়ে একটি শিরোপা জিততে না পারা। কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে সেই আক্ষেপ ঘোচান তিনি। তার সাবেক সতীর্থ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সের্হিও আগুয়েরো মনে করেন, ওই সাফল্য মেসির জীবন বদলে দিয়েছে। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’ওর জয়ী তারকা এবার বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন বলে বিশ্বাস আগুয়েরোর।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা পা রাখে ফেভারিট দলগুলোর একটি হিসেবে, টানা ৩৬ ম্যাচের অপরাজেয় পথচলা সঙ্গী করে। তবে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে খাদের কিনারায় চলে যায় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের দুই ম্যাচে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোর টিকেট নিশ্চিত করে তারা। এরপর গত শনিবার অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আমেরিকার দলটি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের প্রথম গোলটি করেন মেসি, যা চলতি আসরে তার তৃতীয় গোল এবং পাঁচ আসর মিলিয়ে নকআউট পর্বে প্রথম। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্ব মঞ্চে সবচেয়ে বেশি গোলের তালিকায় কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে এককভাবে দুই নম্বরে জায়গা করে নেন তিনি, ৯ গোল।
আগুয়েরো মনে করেন, গত বছর কোপা আমেরিকা জিতে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর পরই মেসির সঙ্গে সমর্থকদের ‘বন্ধন’ দৃঢ় হয়েছে। আর্জেন্টিনার সাবেক এই ফরোয়ার্ড বলেন, ওই একটি শিরোপা অনেকটাই ভারমুক্ত করে দিয়েছে মেসিকে, জাতীয় দলে খেলাটাও অনেক বেশি উপভোগ করছেন তিনি।
আগুয়েরো বলেন। লক্ষ্য অর্জনের (বিশ্বকাপ জয়) জন্য লিও সম্ভাব্য সবকিছুই করবে, যা আমরা সবাই চাই। লিও খুশি। কোপা আমেরিকা জয় তার জীবন বদলে দিয়েছে। কোপা আমেরিকার পর সে আবার জাতীয় দলে খেলা উপভোগ করছে, যেমনটা আমরা অনূর্ধ্ব-২০ দলে ছিলাম। সে সমালোচনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে ফাইনালগুলোতে হেরেছে। কোপা আমেরিকা জয় ছিল তার জন্য মুক্তির আনন্দ।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পরপর দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালেও হারের বিষাদ সঙ্গী হয়েছিল মেসির। আর্জেন্টিনায় কঠোর সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল তাকে। এমনকি জাতীয় দলকে বিদায়ও বলে দিয়েছিলেন তিনি।
পরে অবসর ভেঙে ফিরে আসেন। সময়ের সঙ্গে পারফরম্যান্স আর দলীয় সাফল্য দিয়ে আর্জেন্টাইনদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন মেসি। ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে দেশটির মূল ভরসা তিনি। সেই পথচলায় আগামী শুক্রবার শেষ আটে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন জটিলতা সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেন আগুয়েরো। আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।