১৯৫০ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের হারাটা অবিশ্বাস্য ছিল রীতিমতো। টেলিগ্রামে খবর পেয়ে ইংলিশ পত্রিকাগুলো ভেবেছিল, ভুল হয়েছে বোধ হয়। তাই তারা ফল বসায় ইংল্যান্ড ১০, যুক্তরাষ্ট্র ০! তেমনি ১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার কাছে ঐতিহ্যবাহী দল ইতালির হারটাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে অনেকের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জিতে আসা আর্জেন্টিনা ১৯৯০ সালেও ছিল ফেভারিট।
১৯৬৬, উত্তর কোরিয়া ১ : ০ ইতালি
মিডলবরোবাসী আদর করে তাঁদের ডাকত ‘রেড মসকুইটোজ’। ক্ষিপ্রতা ও শৈলীর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন ফুটবল দিয়েই খ্যাতিটা আদায় করে নিয়েছিলেন এশিয়ার প্রতিনিধিরা। অথচ সমাজতান্ত্রিক দেশ বলে কি হ্যাপাটাই না পোহাতে হয়েছিল তাঁদের। ব্রিটিশরা প্রথমে তাঁদের ভিসা দিতে অস্বীকার করে। পরে শর্ত দেয়, কোনো ম্যাচে তাঁদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত বাজানো চলবে না। ‘উই ক্যান বিট এনিবডি, ইভেন দ্য বেস্ট’ নামের নতুন এক রণসংগীত সঙ্গী করেই বিশ্বকাপে খেলতে নামে উত্তর কোরিয়া। সেবারের অন্যতম ফেভারিট ইতালিকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেই ম্যাচটি জিতে নেয় তারা পার্ক ডি উকের গোলে। সুবাদে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় লাল কোরিয়ানরা, যা ২০০২ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত এশিয়ান কোনো দেশের সর্বোচ্চ অর্জন। আর অন্যদিকে ইতালি গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর চুপিসারে দেশে ফেরে, সেখানে অপেক্ষায় ছিল ক্ষুব্ধ সমর্থকদের ছোড়া পচা টমেটো!
১৯৯০, ক্যামেরুন ১ : ০ আর্জেন্টিনা
উদ্বোধনী ম্যাচটা হেসেখেলেই জিতবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার দল—এ নিয়ে দ্বিধা ছিল না কারোই। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জন্য হিসাবটা গোলমাল করে দিলেন ওমাম বিয়িক। একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকের বর্ণনায় এটা ছিল স্যামন মাছের জল ছেড়ে লাফিয়ে ওঠার মতো। ৬৭ মিনিটে করা এ গোলের মিনিট পাঁচেক আগেই লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান গোলদাতার বড় ভাই আন্দ্রে কানা বিয়িক। ম্যাচ শেষের খানিক আগে মার্চিং অর্ডার পান বেঞ্জামিন মেসিংও। কিন্তু ৯ জন নিয়ে খেলেও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ঠিক ঠেকিয়ে দেয় আফ্রিকার অদম্য সিংহরা। খোলে বিশ্বকাপ অন্ধকার মহাদেশটির অগ্রগামিতার এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
১৯৮২, আলজেরিয়া ২ : ১ পশ্চিম জার্মানি
১৯৮২ বিশ্বকাপের অনেক অঘটনের সেরা অঘটন ছিল এই ম্যাচ। অসাধারণ ফুটবল খেলে আফ্রিকানরা সেবার অন্যতম ফেভারিটদের রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছিল। বিরতির পর মাত্র ১৫ মিনিটে নির্ধারিত হয় ম্যাচের জয়-পরাজয়। ৫৪ মিনিটে রব মাজদারের করা গোলটির জবাব দেন জার্মান অধিনায়ক কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে ৬৮ মিনিটে। কিন্তু মিনিটের কাঁটা না পেরোতে লাখদার বেলুমি অসাধারণ এক গোলে ভিত নাড়িয়ে দেন জার্মানদের। ম্যাচে আর ফিরতেই পারেননি তাঁরা। মজার ব্যাপার হলো, ম্যাচের আগে জার্মান কোচ ইয়াপ ডুরাল অহম নিয়েই বলেছিলেন, ‘এ ম্যাচ হারলে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরব। ’ বলা বাহুল্য, কথা রাখেননি তিনি।
২০০২, সেনেগাল ১ : ০ ফ্রান্স
কোথায় ডিফেন্ডিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও সদ্য ইউরো জেতা ফ্রান্স আর কোথায় আফ্রিকার অখ্যাত এক দেশ সেনেগাল। ডেভিড ত্রেজেগে, থিয়েরি অঁরি আর জিব্রিল সিসের মতো ইউরোপের তিন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা নিয়ে খেলতে নামা জিনেদিন জিদানের দলকে এই পরিণতি সইতে হলো। প্রথম ম্যাচেই ফরাসি থ্রি মাস্কেটিয়ার্স স্ট্রাইকাররা গোলের ঠিকানা ছাড়া আর সবই পেয়েছেন, এমনকি বারপোস্টে লাগিয়েছেন কয়েকবার। কিন্তু খেলার আধাঘণ্টার মাথায় পাপা বুবা বিয়ুপ দুর্দান্ত এক গোলে অবিস্মরণীয় এক বিশ্বকাপের সূচনা এনে দেন সেনেগালকে।