কাতার বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ল এশিয়ার দেশ জাপান। একই বিশ্বকাপে দুই প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও স্পেনকে হারিয়ে দিল তারা। গত ২৩ নভেম্বর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারায় জাপান। ঠিক একই ব্যবধানে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গ্রুপের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্পেনকেও হারিয়ে দিল তারা। যদিও প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিল জাপান, তবে রিৎসু দোয়ান এবং আও তানাকার গোলে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এশিয়ার দেশটি। স্পেনের একমাত্র গোলটি করেন আলভারো মোরাতা।
জার্মানিকে হারানোর পর অনেকেই মনে করেছিলেন, জাপানের জয় নেহাতই অঘটন। বারবার এমন হবে না। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে স্পেনকে হারিয়ে জাপান বুঝিয়ে দিল, জার্মানির বিরুদ্ধে জয় কোনও অংশেই অঘটন ছিল না। এশীয় দেশগুলো যে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার জায়গায় চলে এসেছে, বৃহস্পতিবার রাতের ফলেই তা প্রমাণিত।
প্রথমার্ধে স্পেনের পাসিং ফুটবলে কিছুটা গুটিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে জাপান দেখিয়ে দিল প্রেসিং ফুটবল কাকে বলে! দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে আক্রমণ করে গেলেন জুনিয়া ইতো, ইউরি নাগাতোমো, হিদেমাসা মোরিতারা। স্পেনকে খেলার জায়গাই দিলেন না তারা। প্রথমার্ধে যে পাসিং ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছিল স্পেন, দ্বিতীয়ার্ধে তা উধাও!
তবে জাপানের বিরুদ্ধে স্পেন শুরুটা করেছিল স্পেনের মতোই। শুরু থেকেই দেখা যেতে থাকে পাসের ফুলঝুরি। মাঝমাঠে একের পর এক পাস খেলে জাপানকে হতোদ্যম করে দিতে চেয়েছিল স্পেন। তার মাঝেই খেলার বিপরীতে সুযোগ পায় জাপান। সের্জিও বুস্কেৎসের থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে ওঠেন জাপানের দুই ফুটবলার। তবে সেই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারেনি।
স্পেন দ্রুত ম্যাচে ফেরে। ১১ মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। গোল করেন আলভারো মোরাতা। বাঁ দিক থেকে নিখুঁত ক্রস ভাসিয়েছিলেন সেজার অ্যাজপিলিকুয়েতা। মাথা ছুঁইয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় গোল করেন মোরাতা। নেদারল্যান্ডসের কোডি গাকপোর মতো গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচেই গোল করেন তিনি। এরপর স্পেনের দাপট আরও বেশি করে টের পাওয়া যায়। মাঝমাঠে আরও বেশি পাস খেলতে থাকেন রদ্রি, পাউ তোরেসরা। ২৬ মিনিটে সুযোগ পায় স্পেন। মোরাতার থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন দানি ওলমো। তা বাইরে যায়। তবে মোরাতা অফসাইডে থাকার কারণে গোল হলেও বাতিল হয়ে যেত।
প্রথমার্ধে আর কোনও গোল হয়নি। তবে স্পেনের পাসের আধিপত্য দেখেও থমকে যায়নি জাপান। প্রতিটি বল তারা করেছে তারা। স্পেনের ফুটবলারদের জায়গা দিতে চায়নি। কোণ ছোট করে এনেছে। সেই সুফল তারা পেয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতিতে তাকেফুসা কুবোকে তুলে রিৎসু দোয়ানকে নামান জাপানের কোচ হাজিমে মোরিয়াসু। সেই কৌশল কাজে দেয় সঙ্গে সঙ্গেই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করে জাপান। প্রতিপক্ষের আচমকা তেড়েফুঁড়ে ওঠা খেলার বিরুদ্ধে মানিয়ে নিতে পারেনি স্পেন। দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে গোল করেন দোয়ান। বক্সের বাইরে বল পান তিনি। সামান্য ভেতরে ঢুকে বাঁ পায়ে জোরালো শট নেন। স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি।
ঠিক ২ মিনিট ২২ সেকেন্ডের মধ্যে দ্বিতীয় গোল করে জাপান। এবার গোল করেন আতোমু তানাকা। এ ক্ষেত্রেও ভূমিকা নেন সেই দোয়ান। বাঁ দিকের প্রায় গোললাইন থেকে ক্রস করেন তিনি। স্পেনের গোলকিপার নিজের জায়গায় ছিলেন না। চলতি বলে পা ঠেকিয়ে গোল করেন তানাকা।