ভোরের সূর্য সব সময় বলে দিতে পারে না দিনের শেষটা কেমন হবে। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা সে কথা আবারও প্রমাণ করে দিল। সৌদির কাছে ২-১ গোলের হার, বিষাদের করুণ সিম্ফনি; সব দু’পায়ে ঠেলে দলকে আলোর দিকেই নিয়ে গেলে ফুটবলের কালের সেরা জাদুকর।
রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন, ‘মেঘ দেখে করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’ অথবা ‘রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে’ কখনো পাঠ করেছিলেন কী লিও? উত্তর জানা নেই। তবে মেঘকে ভয় করার কিছু নেই আর দিনের আলোর গভীরেই যে থাকে রাতের তারা তা তিনি ও তার দল প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রবাদ প্রতিম বাক্যকে তুড়ি মেরে।
মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারানোর পর পোলিশদেরও একই তরিকায় ধবল ধোলাই করেছে আলবিসেলেস্তা। আর সেই আক্রমণে যোগ্য সেনাপতির মতোই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিওনেল মেসি।
এটাই এলএম টেনের শেষ বিশ্বকাপ সে কথা অনেকেই মানছেন, লিওনেল মেসিও সেই কথা বলেছেন একরকম। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন পোল্যান্ডের সাথেই এই বুঝি তার হলো সারা (শেষ)। তবে না এবার ফুটবলের রাজপুত্রের সাথে দুঃখের কোনো খেলা খেলেনি নিয়তি। বরং পেনাল্টি মিসের পরও তাকে দিয়েছে ২-০ গোলের জয়, বানিয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।
আর তাতেই সুপার সিক্সটিনের পথটা মেসির জন্য হয়েছে আরও অনেকটা সোজা। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা মেসির জন্য খুব একটা দুরূহ কাজ হবে না, সে কথাই সবাই মানেন। যদিও বিনয়ী মেসি বলেছেন, সকারুরা মোটেও সহজ প্রতিপক্ষ নয়।
সবাই যেখানে শেষ দেখেন সেখান থেকে নতুন শুরু করা লিও’তো জানেন কেমন করে ফিরে আসতে হয়। পেছন থেকে হয়তো তাই অঞ্জন দত্ত বিস্ময়ভরা কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়?’
নতুন জীবন পাওয়া মেসি জানেন, রানওয়ে ছেড়ে একবার আকাশে ডানা মেলতে পারা বিমানকে আর মাটিতে নামানো যায় না সহজে। সামনে যার থাকে অসীম আকাশ তীব্র কোনো ঝড় না এলে তার গন্তব্যে সহজ অবতরণ কেবল সময়ের ব্যাপার। এবার দেখার অপেক্ষা নতুন শুরুটা মেসি রাঙাবেন কেমন করে। কোন গল্পের বাঁকে তিনি ভেড়াবেন তার শেষ তরী… নাকি রবীন্দ্রনাথের মতো বলে উঠবেন, এসে ‘কুলের কাছাকাছি আমি ডুবতে রাজি আছি, আমি ডুবতে রাজি আছি।’