নেপালের কাঠমান্ডুতে নতুন ইতিহাস গড়া নারী ফুটবলারদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। আজকের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নদের এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা স্বীকার করেছেন তিনি। নেপাল জয় শেষে বুধবার দুপুরে দেশে আসে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফ। সেখান থেকে শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় পৌঁছায় বাফুফে ভবনে। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে কোচ ছোটন তুলে ধরেন সাবিনা খাতুন-সানজিদা আকতারদের সাফল্যের ধারাবাহিক গল্প।
কোচ ছোটন বলেন, আজকের সাফজয়ী নারীরা যে উঠে এসেছে এর বিপ্লব ঘটেছিল ২০১২ থেকে। ফিফা কাউন্সিলের সভাপতি মাহফুজা আক্তার কিরণ আপা একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে ৪০টি জেলা অংশগ্রহণ শুরু করেছিল। আগে দলে বিভিন্ন ডিসিপ্লিন থেকে খেলোয়াড় আসতো। কিন্তু বিভিন্ন ডিসিপ্লিন থেকে ফুটবলার আসলে সমন্বয়ে ঝামেলা হয়। আমাদের দরকার ছিল এমন ফুটবলার, যারা ফুটবল খেলবে ও সব সময় ফুটবল নিয়ে চিন্তা করবে। আজকের যারা সানজিদা কিংবা কৃষ্ণা রানি সরকার, তারা সেই প্লান থেকেই আসে।
কোচ আরও বলেন, আমরা প্রথমে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে খেলি। সেই আসরে জর্ডান এসেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই ম্যাচে আমরা জর্ডানকে হারিয়ে দেই। যা আমাদের দারুণ অনুপ্রেরণা দেয়। ২০১৬ সালে অর্থাৎ পরের বছর আমরা কোয়ালিফাই করি। সেখানে আমাদের গ্রুপে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। তাই আমরা দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করি। বাফুফে সভাপতিও আমাদের সেই ক্যাম্পে উৎসাহ দেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ৩৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে ক্যাম্প শুরু হয়। সেই ক্যাম্পে এখন ৭০ জন আছে। ক্যাম্প শুরু হওয়ার পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫’তে চ্যাম্পিয়ন হই। ২০১৮ সালের ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ সাফেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ সাফেও চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। তবে, শুধু বয়সভিত্তিক দলের সাফল্যই পাই, জাতীয় দলে পাই না এ কারণে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। আমরা সে সময় সাফল্য পাইনি কারণ ক্যাম্পের খেলোয়াড়রা ছিল বয়সে অনেক ছোট। আর বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা অনেক বয়সী।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল মেয়েদের বয়স যখন ১৯-২০ হবে তখন আমরা ভালো করবো। এই বিশ্বাস নিয়েই এবার আমরা নেপালে গিয়েছিলাম। মেয়েরা হার্ডওয়ার্ক করেছে বলেই আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচে দাপটের সাথে খেলেছি। আমরা র্যাঙ্কিংয়ে ৫৬ নাম্বারে থাকা ভারতকে হারিয়েছি। ১০২ র্যাঙ্কিংয়ের নেপালকে হারিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল এখন ফাইনাল খেলবো আর ২০২৪-২৫ সালে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবো। কিন্তু মেয়েদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।