পায়ের জাদুতে দিয়েগো ম্যারাডোনা যতটা ফুটবল বিশ্বকে মাতাতে পেরেছিলেন, ততটা আধুনিক যুগের মেসি-রোনালদোরা পেরেছিলেন কি না সন্দেহ। একক নৈপূন্য এবং কৃতিত্ব দিয়ে সারা বিশ্বের ফুটবলকে এতটা মাত করেছে যে, তার তুলনা অপরিসীম।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ম্যারাডোনা সব সময়ই সবার কাছে সমান প্রাসঙ্গিক। কিংবদন্তি এ তারকার জন্মদিন আজ।
শুধু আর্জেন্টিনা নয়, বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের কাছে আবেগের নাম ম্যারাডোনা। ১৯৬০ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেচে থাকলে কিংবদন্তি এই তারকার বয়স হতো ৬৪ বছর।
ছোটবেলা থেকে ফুটবলে দারুণ আগ্রহ ছিল ম্যারাডোনার। সেই আগ্রহের সঙ্গে যোগ হয় বিস্ময়কর প্রতিভা। দুই মিলিয়ে খেলোয়াড় হিসেবে তিনি দ্রুত পৌঁছে যান ফুটবলজগতের একেবারে শীর্ষে। ফিফার চোখে ম্যারাডোনা শতাব্দীর সেরা ফুটবলার।
ম্যারাডোনার বাবার নাম দিয়েগো মারাদোনা ‘চিতরো (মৃত্যু: ২০১৫) এবং তার মায়ের নাম দালমা সালভাদোর ফ্রাঙ্কো ‘দোনিয়া তোত’” (১৯৩০–২০১১)। তারা উভয়েই কোরিয়েন্তে নদীর তীরে একে অপরের থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে কোরিয়েন্তেস প্রদেশের উত্তর-পূর্বের এস্কুইনা শহরে জন্মগ্রহণ এবং শৈশব অতিবাহিত করেন।
১৯৫০ সালে তারা এস্কুইনা ছেড়ে বুয়েনোস আইরেসে বসতি স্থাপন করেন। ম্যারডোনা তার শৈশবেই পরিবারে সাথে কোরিয়েন্তেস প্রদেশ থেকে বুয়েন্সে আয়ার্সের দক্ষিণ উপকণ্ঠে অবস্থিত ভিয়া ফিওরিতো-এ স্থানান্তরিত হন এবং সেখানেই তিনি তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন।
মাত্র আট বছর বয়সে, ম্যারাডোনাকে একজন প্রতিভাবান স্কাউট তার প্রতিবেশী ক্লাব এস্ত্রেয়া রোহাতে খেলতে দেখে। অতঃপর তিনি সেই স্কাউটের হাতধরে বুয়েন্স আয়ার্স ভিত্তিক ফুটবল ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের সিনিয়র ফুটবল দল লস সেবায়িতাস-এ যোগ দেন।
একজন ১২ বছর বয়সী বলবয় হিসেবে তিনি প্রথম বিভাগের খেলার প্রথমার্ধের বিরতির সময় বল নিয়ে তার জাদুকরী কুশল প্রদর্শন করে দর্শকদের উল্লসিত করেন। নিজের বেড়ে ওঠার পেছনে ম্যারাডোনা ব্রাজিলের সৃজনশীল খেলোয়াড় রিভেলিনো এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জর্জ বেস্টকে তার অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ফুটবলে নিজের কৌশল দেখাতে দেখাতে আর্জেন্তিনোস জুনিয়রের যুব ফুটবল দলে খেলেন। ১৯৭৬ সালে শুরু করে সিনিয়র ফুটবল ক্যারিয়ার। এরপর তো দিয়েগো ম্যারাডোনাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যদিও বয়স কম থাকার কারণে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলে নেয়া হয়নি তাকে।
১৯৮২ বিশ্বকাপে প্রথম খেলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ তো ছিল তার জীবনের এক সোনালি অধ্যায়। সেবারের বিশ্বকাপে তিনি ফুটবল বিশ্বের সামনে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য এক শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেন। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে মাদক গ্রহণের অভিযোগে।
ক্লাব ফুটবলে খেলেন বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, ন্যাপোলি, সেভিয়া, নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ এবং সর্বশেষ বোকা জুনিয়র্সে। কোচ হিসেবে ২০০৮ থেকে ২০১০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের।