কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় মুখোমুখি হয় প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন ও এশিয়ার দেশ জাপান। এই ম্যাচে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দেয় জাপান। এতে কপাল পোড়ে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির। কেননা, এই ম্যাচের ফলাফলের উপর নির্ভর করছিল তাদের ভাগ্য।
সমীকরণ ছিল- পরবর্তী রাউন্ডে যেতে গেলে জার্মানিকে জিততে হবে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে। অপরদিকে জাপানকে হারতে হবে স্পেনের বিরুদ্ধে। যদি জাপান স্পেনের সঙ্গে ড্র করে, তাহলে জার্মানিকে দুই বা তার অধিক গোলের ব্যবধানে জিততে হবে পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট পেতে।
জার্মানি শেষ ম্যাচে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ৪-২ ব্যবধানে জয় পেয়েও ছিটকে পড়েছে তারা। কারণ, জাপান স্পেনকে হারিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে জাপানের একটি গোল নিয়ে। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ৫১ মিনিটে গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেন তানাকা। তবে কাওরু মিতোমার যে পাস থেকে তানাকা গোল করেন, সেটা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। একাধিক মহলের দাবি, মিতোমা যখন বল পাস করেন, ততক্ষণে সেটি লাইন পেরিয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ গোলটা বৈধ নয়। নিজেদের দাবির স্বপক্ষে একটি ছবিও দেখাতে থাকেন তারা। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে, তাতে দেখে মনে হবে যে বলটা লাইন পেরিয়ে গেছে।
কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে নিয়মের মাহাত্ম্য। নিয়ম অনুযায়ী, যদি ‘এরিয়াল ভিউ’ (উপরের দিক থেকে ভিউ) থেকে বলের কোনও অংশ লাইনের মধ্যে থাকে, তাহলে সেই বল মাঠের মধ্যে আছে বলে ধরা হবে এবং খেলা চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ গোললাইন টেকনোলজিতে যেভাবে ‘এরিয়াল ভিউ’ থেকে দেখে নির্ধারণ করা হয় যে বল গোললাইন পেরিয়েছে কি না, ঠিক সেভাবেই বল মাঠের বাইরে গেছে কি না, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু ‘এরিয়াল ভিউ’-তে বলের পুরো ১০০ শতাংশ লাইন পার করেনি, তাই জাপানের পক্ষে সিদ্ধান্ত গেছে।
বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার ৯ নম্বর আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনও বল লাইন পেরিয়ে গেছে বলে তখনই ধরা হবে, যখন সেই বল মাটিতে ঠেকা বা শূন্যে থাকা অবস্থায় গোললাইন বা টাচলাইনের পুরোটা (১০০ শতাংশ অর্থাৎ বলের কোনও অংশ লাইনের এপার বা লাইনের উপরে থাকবে না) পেরিয়ে গেছে। যে নিয়মের কারণেই স্পেনের বিরুদ্ধে যখন মিতোমা বল পাস করেন, তখনও খেলার মধ্যেই ছিল বল।
উল্লেখ্য, ওই গোলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও বিতর্ক শুরু হয়েছে, কারণ জাপানের ওই গোল বাতিল হয়ে গেলে বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে চলে যেত জার্মানি। কিন্তু ওই গোলের সুবাদে জাপান জিতে যাওয়ায় বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায় থেকেই ছিটকে গেছেন থমাস মুলাররা। এমনিতে স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ ‘ই’-তে শীর্ষ স্থানে শেষ করেছে জাপান (৬ পয়েন্ট)। স্পেন চার পয়েন্টে আটকে গেছে। জার্মানির চার পয়েন্ট থাকলেও গোলপার্থক্যে স্পেন নক-আউটে গেছে।