ঠিক যেন স্বপ্নের মতো এক বিশ্বকাপ কাটাচ্ছে মরক্কো। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামের মতো দলকে পেছনে ফেলে নক-আউটে উঠেছিলো ‘অ্যাটলাস লায়নসরা’। নক-আউটে স্পেনকে স্তব্ধ করে কোয়ার্টার ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে মরক্কানরা। স্বপ্নযাত্রাকে আরও একটু দীর্ঘায়িত করতে আজ কোয়ার্টার ফাইনালে আফ্রিকান দেশটির প্রতিপক্ষ ইউরোপের জায়ান্ট পর্তুগাল।
বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৯টায় আল-থুমামা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে মরক্কো আর পর্তুগাল।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত ছোট হয়ে আসছে শিরোপার আরো কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে স্বপ্ন পূরণে ততই অঙ্গীকারবদ্ধ দলগুলো। বিশেষ করে অঘটনের জন্ম দিয়ে এগিয়ে আসা দলগুলোর জন্য সেই স্বপ্ন আরো বড় হয়ে দেখা দেয়, মরক্কো তেমনই একটি দল। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার-বেলজিয়ামের মত দলকে টপকে শীর্ষস্থান লাভের পর শেষ ষোলোতে স্পেনকে পেনাল্টিতে পরাজিত করে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে আসা মরক্কোর জন্য স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু।
অন্যদিকে, পর্তুগালও কম যায়না। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে পরাজয় এবারের আসরে চার ম্যাচে পর্তুগীজদের প্রথম হার। কিন্তু তারপরও গ্রুপের শীর্ষস্থান হাত থেকে ফসকে যায়নি। নক আউট পর্বে সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে গুড়িয়ে দিয়ে দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে মরক্কোর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।
শেষ ম্যাচে তারকা ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি যেভাবে স্পেনের আক্রমনভাগকে রুখে দিয়েছে, ঠিক একইভাবে জয়সূচক পেনাল্টি স্ট্রোকটি এসেছে তার পা থেকেই। নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা গোলশুন্য ড্র হওয়ার পর স্পেনকে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে পরাজিত করে শেষ আটের টিকিট পায় মরক্কো। স্পেনের হাজারো পাসের কৌশলকে শেষ পর্যন্ত সফল হতে দেননি মরোক্কান কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। পেনাল্টিতে গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো স্প্যানিশদের দুটি শট রুখে দেন, আরেকটি শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। অন্যদিকে মরক্কো তিনটি শটই গোলে পরিণত করেন।
গত ১২ বছরে প্রথম ও চতুর্থ আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ আট নিশ্চিত করা মরক্কোর জন্য এখন পুরো আফ্রিকান অঞ্চলই আশা দেখছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে আরব সমর্থকরা। এর আগে ১৯৮৬ সালে একবারই অ্যাটলাস লায়ন্সরা বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলেছিল। এই নিয়ে গত সাত ম্যাচের ছয়টিতেই তারা কোন গোল হজম না করে মাঠ ছেড়েছে। বিশ্বকাপে তারা এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে।
হাকিমির প্রতিভা ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সতীর্থ ফুল-ব্যাক নুসাইর মাজরুই এবং তাদের মধ্যমাঠে অত্যন্ত পরিশ্রমী সোফিয়ান আমরাবাতের কারনেই মূলত মরক্কোর এই সাফল্য।
বিশ্ব ফুটবলে এই মুহূর্তে অন্যতম শক্তিশালী রক্ষনভাগ হিসেবে মরক্কোকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রুপ পর্বে ইউরোপীয়ান দুই শীর্ষ দল ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামকে রুখে দেওয়ার পর এবার পর্তুগালকেও আটকে দিতে তারা মুখিয়ে আছে।
এদিকে আইকনিক অধিনায়ক রোনালদোকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠ নামা ছিল পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দোস সান্তোসের সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু রোনালদোর পরিবর্তে নামা বেনফিকার ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গনসালো রামোস কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে টুর্ণামেন্টের প্রথম হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছে। এই সাফল্যের পর রোনালদো পরবর্তী যুগে রামোসের উপর এখন থেকেই কেউ কেউ ভরসা করতে শুরু করে দিয়েছেন। এটা ছিল পর্তুগাল জাতীয় দলের মূল একাদশে খেলা রামোসের প্রথম ম্যাচ। তিন জয় ও ১২ গোল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী পর্তুগাল এখন উড়তে থাকা মরক্কোকে মাটিতে নামিয়ে আনতে চায়। একইসঙ্গে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পথে আরো একটি ধাপ নিশ্চিত করতে চায়।
১৯৬৬ সালে সাবেক কিংবদন্তী ইউসেবিও ছিলেন অনুপ্রেরণা, যার কল্যানে পর্তুগাল প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে খেলেছিল। ইউরো ও ন্যাশনস লিগ জয়ী দলটি এখনো বিশ্বকাপের শিরোপা খরা কাটাতে পারেনি।
পর্তুগালের সর্বকালের সর্বোচ্চ ম্যাচ (১৯৫) ও সর্বাধিক গোল (১১৮) করা রোনালদোকে আবারো বেঞ্চে রেখেই আজকের ম্যাচেও সান্তোস দলের নতুন নায়ক রামোসকে মাঠে নামালে খুব একটা অবাক হবার কিছুই থাকবে না। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোয়াও ক্যান্সেলোও মাঠে ছিলেন না। লেফট-ব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন রাফায়েল গুইরেইরো, ডান দিকে ছিলেন দিয়েগো ডালোট। আজকের ম্যাচেও অপরিবর্তিত দল নিয়ে মাঠে নামার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মাঝমাঠে ওটাভিওর উপরই ভরসা করছেন সান্তোস। উইলিয়াম কারভালহো আবারও রুবেন নেভেসের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইনজুরির কারনে নক আউট পর্বের আগে দল থেকে ছিটকে গেছেন নুনো মেন্ডেস। ডানিলোর খেলার নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী পেপের সঙ্গে থাকছেন রুবেন ডিয়াসই।
পর্তুগাল দলে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এলেও মরক্কো শুরু থেকে প্রায় একই দল নিয়ে মাঠে নেমেছে। আজকের ম্যাচের আগে অবশ্য দলে বেশ কয়েকটি ফিটনেস শঙ্কা রয়েছে। ওয়েস্ট হ্যামের ডিফেন্ডার নায়েফ আগুয়ের্ডকে নিয়ে রয়েছে কিছুটা অনিশ্চয়তা।