আজ রবিবার বার্সেলোনায় নিজের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন করছেন লিওনেল মেসি। এই ক্লাবের হয়ে তিনি ৬৭২টি গোল করেছেন, ১০টি লা লিগা শিরোপা, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর ৬টা ব্যালন ডি অর জিতেছেন। সব মিলিয়ে স্মৃতির অভাব হবে না বার্সেলোনা ভক্তদের, একই সাথে লিওনেল মেসিরও। প্রায় ২১ বছর ধরে বার্সেলোনাতেই ছিলেন মেসি, শৈশব-তারুণ্য কেটেছে ন্যু কাম্পের মাঠে, অনুশীলনে। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে লিওনেল মেসির দশটা মুহূর্ত যা মেসি ভক্তদের মনে থাকবে-
প্রথম হ্যাটট্রিক, ২০০৭ : লিওনেল মেসি তখনও কিশোর, যখন তিনি বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার মাঠে হ্যাটট্রিক করেন। ৩-৩ গোলে ড্র হয় ম্যাচটি। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলে দিয়ে একটা দৃষ্টিনন্দন গোল করেন মেসি। এদিনই লিওনেল মেসি বার্সেলোনায় পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন সবার প্রিয়পাত্র।
সবচেয়ে সুন্দর গোল : অনেকেই ডিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা গোলের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পান এই গোলটির। ১৪ বছর আগে কোপা দেল রে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে লিওনেল মেসি গেটাফের বিপক্ষে যে গোলটি করেন সেটিকে মনে করা হয় তার করা সেরা গোল। অনেকে মেসির স্বদেশী ডিয়েগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পান এই গোলটির। মেসি বার্সেলোনার অর্ধে বল পেয়ে একাই পাঁচজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে, গোলকিপারকে ছাড়িয়ে গোলটি করেন।
প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল গোল : একটা সময় লিওনেল মেসিকে নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠতো যে মেসি কি ইউরোপে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে ভালো খেলতে পারবেন? সে সময় মেসি ১০টি ম্যাচে ইংলিশ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একটি গোলও করতে পারেননি।কিন্তু ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে লিওনেল মেসি জবাব দেন, জাভির ক্রস থেকে মেসি রিও ফার্দিনান্ডের মতো দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডারের সামনে হেডে গোল দেন। এই ম্যাচটিকে লিওনেল মেসি বনাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো লড়াইও বলা হয়ে থাকে। এর ঠিক দুই বছর পরে মেসি আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করে নিজের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মেডেল নিশ্চিত করেন।
আর্সেনালের বিপক্ষে এক ম্যাচে চার গোল : ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল মেসি রীতিমতো ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালকে নিয়ে ছেলেখেলা করেন। মেসি পায়ের সম্মুখভাগের আলতো ছোঁয়ায় গোলকিপার ম্যানুলে অ্যালমুনিয়ার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এই ম্যাচে। এর ঠিক দুই বছর পরে জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে লিওনেল মেসি পাঁচ গোলও করেন একই ম্যাচে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পরে লিওনেল মেসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভাঙা : ২০১২ সালে গ্রানাদার বিপক্ষে একটি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই বার্সেলোনার ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলের মালিক হন লিওনেল মেসি। এর আগে সেজার রদ্রিগেজ ২৩২ গোল দিয়ে সবার ওপরে ছিলেন।
এক বছরে ৯১ গোল : লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলের বন্যার মধ্যেও একটা রেকর্ডকে মনে হয় যে এটা আর কেউই স্পর্শ করতে পারবে না, সেটা ২০১২ সালে ক্যালেন্ডার বছরে ৯১টি গোল। বার্সেলোনার হয়ে এই বছর তিনি ৭৯টি গোল করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে ১২টি করেন, তাও মাত্র ৬৯টি ম্যাচ খেলে। এই বছর লিওনেল মেসি টানা চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি অর পান।যদিও এই বছর বার্সেলোনা শুধুমাত্র কোপা ডেল রেই জিততে পারে।
২০১৪ সালে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা : ২০১৪ সালে লিওনেল মেসি হন লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা। ঠিক ২ বছর পর ২০১২ সালে মেসি আবার হ্যাটট্রিক দিয়েই রেকর্ড ভাঙেন। এবার গড়েন লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড। এর আগে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন টেলমো জারা। মেসি এখন লা লিগায় ৪৭৪ গোলের মালিক, আগের রেকর্ডের চেয়ে ২০০ গোল বেশি।রোনালদোর চেয়ে ১৫০ গোলেরও বেশি গোলে এগিয়ে মেসি, রোনালদো অবশ্য ২০১৮ সালে লা লিগা ছেড়ে ইতালিয়ান লিগে চলে যান।
এল ক্লাসিকোতে শেষ মুহুর্তে জিতিয়ে ৫০০তম গোল: এই গোলের পর মেসির উদযাপন ছিল মনে রাখার মতো, জার্সি খুলে বার্ন্যাবুতে রেয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের নিজের নাম দেখান। এটি সম্ভবত লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা গোল। ইনজুরি টাইমে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে স্তাদিও বার্নাব্যুতে গোলটি করেন মেসি, ঠিক ডি বক্সের কিনারা থেকে। ২০১৭ সালের এই গোলটি এল ক্লাসিকো জয়ী গোল, এটি একই সাথে লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের ৫০০তম গোল এবং এই গোলে বার্সেলোনা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে জায়গা করে নেয়- যদিও শেষ পর্যন্ত রেয়াল মাদ্রিদ লিগ শিরোপা জেতে। এই গোলের পর মেসির উদযাপন ছিল মনে রাখার মতো, জার্সি খুলে বার্ন্যাবুতে রেয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের নিজের নাম দেখান।
রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেলেন ৬ষ্ঠ ব্যালন ডি অর জয় : ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ব্যালন ডি অর জেতেন, রোনালদোর এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি অর সংখ্যা পাঁচটি। এই মৌসুমে মেসি ৫৪টি গোল করেন। ২০১২ সালের পর মেসি ২০১৫ ও ২০১৯ সালে ব্যালন ডি অর পান। এই পুরষ্কার নেওয়ার সময় মেসি বলেন, ‘আমার সামনে আরো সুন্দর সময় পড়ে আছে।’
পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া : ২০২০ সালে বার্সেলোনার হয়ে নিজের শেষ মৌসুমে লিওনেল মেসি ৩৮টি গোল করেন। এর মধ্যে ৬৪৪তম গোলটি করে তিনি ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে যান। পেলে এর আগে সান্তোসের হয়ে ৬৪৩টি গোল করেন, যা একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল ছিল। লিওনেল মেসি শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২টি গোল করেছেন। তার সম্ভাব্য গন্তব্য এখন পিএসজি।