English

31.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ২৯, ২০২৫
- Advertisement -

আর্জেন্টিনা এবং মেসির বিশ্বকাপ জয়ের এক বছর

- Advertisements -

ফুটবলকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন তিনি। ফেরতও কম পাননি। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের তকমা লিওনেল মেসি যতবার জয় করেছেন, তার ধারে-কাছেও পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো ফুটবলার যেতে পারবেন কি না সন্দেহ। কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফিটাই ছিল তার অধরা। এই একটি ট্রফিছাড়া মেসি যদি ক্যারিয়ার শেষ করতেন, তাহলে ফুটবলই যেন ব্যর্থ হয়ে যেতো।

২০১৪ সালে ব্রাজিলে একেবারে কাছে গিয়েও জেতা হয়নি বিশ্বকাপ ট্রফি। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোৎসের একমাত্র গোলে শিরোপা জয় করে নেয় জার্মানি। বঞ্চিত থাকতে হয় মেসিকে।

৮ বছর পর কাতার বিশ্বকাপ লিওনেল মেসিকে পূর্ণ করে দিলো। ফুটবলই যেন ধন্য হলো বিশ্বকাপ ট্রফিটা বিশ্বসেরা এই ফুটবলারের হাতে তুলে দিতে পেরে। যদিও নাটকের চেয়েও বেশি নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ছিল ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল।

তবুও, শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গিয়ে সব নাটকের যবনিকাপাত ঘটে। সব জ্বল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপাটা উঠলো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসির হাতে। ১৯৮৬ সালের পর প্রথম এবং সব মিলিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জিতলো আর্জেন্টিনা।

২০২২ সালের ঠিক এইদিনে, ১৮ ডিসেম্বর কাতারের রাজধানী দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে নেয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ছিল ৩-৩ সমতা।

দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেলো মেসির হাতে শিরোপা ওঠার। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতটা কত নাটকীয়তায় ছিল পূর্ণ! সেদিন ফ্রান্সের হাতেও টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপাটা উঠতে পারতো। মেসি যদি হন ফুটবল জাদুকর, কিলিয়ান এমবাপে তাহলে তার চেয়ে কম নন। অন্তত বিশ্বকাপের ফাইনালে। একাই তিন গোল করলেন তিনি। বিশ্বকাপের ফাইনালে বিরল হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করলেন; কিন্তু এমবাপের দুর্ভাগ্য, বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও শিরোপা জিততে পারলেন না।

ম্যাচের ২৩তম মিনিটেই পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি নিয়েছিলেন পেনাল্টি শট। তার বুদ্ধিদীপ্ত বুলেট গতির শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না হুগো লরিসের।

১৩ মিনিটের ব্যবধানে আবারও এগিয়ে গিয়েছিলো আর্জেন্টিনা। এবার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার গোলে বাধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো লুসাইল স্টেডিয়াম, পুরো আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের শত কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থক।

ম্যাচ এগিয়ে চলছিল আর্জেন্টিনার ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে। লুসাইল স্টেডিয়ামের প্রায় ৯০ হাজার দর্শক ধরেই নিয়েছিলো আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে।

কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তা খেলা ক্রিকেট নয়, যেন ফুটবল। কারণ যে খেলাটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রঙ পাল্টাতে পারে। বদলে দিতে পারে পুরো মাঠের চিত্র। তুমুল উল্লাসে ভাসতে থাকা একটি গ্যালারিকে মুহূর্তে স্তব্ধ করে হতাশায় মুচড়ে দিতে পারে এই ফুটবল।

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালেও তেমন এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটিয়েছিলো ফ্রান্স। বিশেষভাবে বললে কিলিয়ান এমবাপে। ৮০তম মিনিটেই পেনাল্টি পেয়ে বসে ফ্রান্স। শট নেন এমবাপে। তুমুল প্রতাপের সঙ্গে আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট পাহারা দেয়া ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ পারলেন না এমবাপের শট ঠেকাতে।

এর এক মিনিট পরই আবারও গোল। এবারও কিলিয়ান এমবাপে। তার দুর্দান্ত এই গোলে নাটকীয়ভাবে বদলে গেলো পুরো লুসাইল স্টেডিয়ামের পরিবেশ। হতাশা নেমে আসার দশা স্টেডিয়ামের গ্যালারিজুড়ে। ম্যাচ তখন ২-২ সমতায়। খেলা গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। এবার আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে গেলেন মেসি। খেলার ১০৮তম মিনিটে আবারও গোল। মেসির অবিশ্বাস্য এক গোলে আবারও উল্লাসের ঢেউ ভেসে আসে।

কিন্তু অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে আবারও নাটকীয়তা। আবারও পেনাল্টি। এবার পেনাল্টি পেলো ফ্রান্স। শট নিলেন এমবাপে। গোল হয়ে গেলো। খেলা সমতায় ৩-৩ ব্যবধানে। চরম উত্তেজনা তৈরি হলো ম্যাচে।

একেবারে শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের বদলি ফুটবলার কোলো মুয়ানি একেবারে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হলেন। পোস্টের সামনে বল পেয়ে আলতো করে ঠুকে দিয়েছিলেন তিনি। বল চলে যাচ্ছিলো আর্জেন্টিনার জালে। উপায়ান্তর না দেখে গোলরক্ষক মার্টিনেজ চার হাত-পা ছড়িয়ে দিলেন। সৌভাগ্য তার। মুয়ানির বল গিয়ে বাধা পেলো মার্টিনেজের পায়ে।

মহা বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছিলো আর্জেন্টিনা। বেঁচে গেলেন মেসি। ওই গোলটি হলে আর ফেরার উপায় ছিল না মেসিদের। তাহলে আবারও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো তাদের। আবারও শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হতো মেসিকে। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে আর্জেন্টিনা এবং মেসিকে বাঁচিয়ে দিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এর কিছুক্ষণ পরই বেজে যায় খেলা শেষের বাঁশি।

এবার টাইব্রেকার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মত পেনাল্টি শ্যুটআউটে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের পালা। এখানে এসে নায়কে পরিণত হলেন সেই মার্টিনেজই। তার অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে আর্জেন্টিনা।

পেনাল্টি শ্যুটআউটে প্রথম দুই শট জালে জড়ালেন যথাক্রমে মেসি এবং এমবাপে দু’জনই। কিন্তু ফ্রান্সের কিংসলে কোম্যানের নিচু হয়ে আসা শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। অরলিয়েন চুয়ামেনি বাম পাশ দিয়ে বল মেরে দিলেন বাইরে।

কোলো মুয়ানি চার নম্বর শটটি জালে জড়ালেও আর্জেন্টিনার দিবালা, লিয়ান্দ্রো পেরেদেস এবং গনজালো মন্টিয়েলের শট ফ্রান্সের জালে জড়াতেই শিরোপা উল্লাসে মেসে ওঠে আর্জেন্টিনা।

কিলিয়ান এমবাপে হ্যাটট্রিক করে জিতলেন গোল্টেন বুটের পুরস্কার। তিনি করলেন মোট ৮ গোল। মেসি করেছিলেন মোট ৭ গোল। তবে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে দ্বিতীবার টুর্নামেন্ট সেরা গোল্ডেন বলের পুরস্কার জিতলেন তিনি। এমিলিয়ানো মাটিনেজ জিতলেন গোল্ডেন গ্লাভসের পুরস্কার।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/ub4l
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন