করোনা মহামারির আতঙ্ক, স্বজন হারানোর বেদনা, জীবিকার অনিশ্চয়তা—সব কিছু পেছনে ফেলে মানুষ যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে, তখন ধরণিতেও ‘বসন্ত এসে গেছে’। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠছে নতুন জীবনের ঢেউ। আজ রবিবার। পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন।
‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’। নেশা-জাগানিয়া এই সময়ে এসেছে ভালোবাসা দিবসও। আজ ১৪ ডিসেম্বর, ভ্যালেনটাইনস ডে। বঙ্গাব্দের পঞ্জিকা সংশোধনের কারণে গত বছর থেকে একই দিনে পড়ছে পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের বিবর্ণতা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস আর কোকিলের মিষ্টি কুহুতানে উন্মাতাল হবে ধরণি। যৌবনে আসবে উদ্দামতা। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসমুখরতায় ভরে উঠবে মন-প্রাণ।
‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ এভাবেই ঋতুরাজ বসন্তের বন্দনা করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকৃতিতে যেমন, শিল্প-সাহিত্য, এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত বাঙালি জীবনে তাত্পর্যময়। এই বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের শুরু।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। তছনছ হয়ে গেছে সব কিছু। দেশেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা, অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে অনেক উত্সব আয়োজন বাতিল করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো খোলা যায়নি। পিছিয়ে গেছে বইমেলা। তাই এবার বসন্ত এসেছে ছন্দহীন, বর্ণহীন এক দুঃসময় ও ঘুরে দাঁড়ানোর অভাবনীয় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সন্ধিক্ষণে। অবশ্য আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। দেশে এখন চলছে করোনার টিকাদান কর্মসূচি। মহামারি থেকে সুরক্ষার আশা জেগেছে মানুষের মনে।
বসন্তের প্রথম দিনে আজ নানা আয়োজনে আলোড়িত হবে রাজধানী ঢাকা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব আয়োজনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলার পরিবর্তে এবার বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ। আয়োজন রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিরও। এটি বসছে বিকেল ৪টায় একাডেমির নন্দন মঞ্চে। এ ছাড়া তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে নগরীর বিভিন্ন উদ্যান, পার্ক, খাবারের দোকান মুখর হয়ে উঠবে।
উৎসবের মধ্যেও বেদনার সুর বাজবে আজ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়াকে হত্যা করা হয়। মিছিলে গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যার ঘটনাটি মনে করে আজও বসন্ত বিষণ্ন হয়ে ওঠে।