পাখির মতো প্রাণী, যাদের বেশির ভাগকেই আমরা এক সঙ্গীতে জীবন পার করে দিতে দেখি, সেসব পাখিদের কিছু কিছু আবার পরকীয়ায় মেতে ওঠে।
কোকিল গোষ্ঠীর পাখিরা বাসা বাঁধে না। তাই এদের নির্দিষ্ট কোনো সঙ্গীও থাকে না। শুধু প্রজনন মৌসুমে সঙ্গী নির্বাচন করে। প্রজননের পর অন্য পাখিদের বাসায় ডিম পাড়ে। তাই প্রজননের পর সঙ্গীর সঙ্গে থাকার প্রয়োজন মনে করে না।
কিন্তু যেসব পাখিদের নিজেদের জোড়া থাকে, তাদের জন্য পরকীয়াটা একটু অদ্ভুদ বটে। তবে এদের পরকীয়ার পেছনেও রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ।
বৈজ্ঞানিক কারণগুলো জানার আগে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন পাখির মধ্যে পরকীয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই তালিকায় সবচেয়ে পরিচিত পাখিটির নাম চড়ুই। আমাদের বসত বাড়িতে যেসব চড়ুই বাসা করে, এরা পরকীয়ায় অভ্যস্ত। এছড়া বিশ্বের আরও পাখির নাম সং স্প্যারো, ইউরোপিয়ান স্টারলিং, মালার্ড ডাক, রেড-ব্যাকড ফেয়ারিউরেন রয়েছে এ তালিকায়।
কেন এরা পরকীয়া করে?
এর পেছনে রয়েছে জেনেটিক কারণ। জেনিটিক বৈচিত্র বাড়ানোর জন্য অনেক পাখি পরকীয়া করে। একাধিক পুরুষে পাখির সঙ্গে মিলনের ফলে তাদের সন্তানেরা বৈচিত্রপূর্ণ জেনেটিক বৈশিষ্ট্য লাভ করে। এট প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের বেশি দেয়।
পরকীয়া করে পাখিরা প্রজনন সাফল্য বাড়াতে চায়। একাধিক পুরুষের সঙ্গে মিলিত হলে মেয়ে পাখির প্রজনন সাফল্য বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সন্তানদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পুরুষ পাখিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক সময় পরকীয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যারা শক্তিশালী বা সুস্থ তারা বেশি সংখ্যক মেয়ে পাখির সঙ্গে মিলিত হতে পারে।
আবার কিছু পাখির যেমন মালার্ড হাঁস (ডাক)—এদের সামাজিক কাঠামো বেশ জটিল। এই সমাজ কাঠামোতে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠা খুব সাধারণ ব্যাপার। এতে তারা নিজেদের সামাজিক অবস্থান দৃঢ় করতে পারে।
গবেষকদের মতে, পাখিদের পরকীয়া সম্পর্কের পেছনে হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেসটোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের হরমনোর মাত্রা পাখিদের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌন আচরণকে প্রভাবিত করে।
পাখিদের পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রকৃতি কেবলমাত্র একগামীতা দ্বারা পরিচালিত হয় না। জেনেটিক বৈচিত্র্য, প্রজনন সাফল্য, পুরুষের প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক কাঠামো পাখিদের পরকীয়া সম্পর্কের প্রধান কারণ।
সূত্র : সায়েন্স ডিরেক্ট ওমলিকুলার ইকোলজি জার্নাল