ছয় দশক ধরে চলমান গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অবশেষে ঘরোয়া বিড়ালের কমলা রঙের ফারের জন্য দায়ী জিনটি আবিষ্কার করেছেন। দুটি পৃথক গবেষণায় উঠে এসেছে, কমলা, ক্যালিকো এবং টরটিসশেল রঙের কারণ হলো- বিড়ালের জেনোমের এমন একটি অংশে ডিএনএ অনুপস্থিতি, যা প্রোটিন তৈরি করে না। এ আবিষ্কার বিড়ালের অনন্য রঙের রহস্যকে স্পষ্ট করেছে।
গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, সেক্স-লিংকড অরেঞ্জ মিউটেশন বিড়ালের লালচে বা হলুদাভ চুলের প্যাচ তৈরি করে। এটি নারী ক্যালিকো ও টরটিসশেল বিড়ালের ক্ষেত্রে র্যান্ডম এক্স-ইনঅ্যাকটিভেশনের চিহ্ন হিসেবে দেখা যায়। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ধরনের সমতুল্য বৈশিষ্ট্যের কোনো উদাহরণ নেই।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এই মিউটেশনটি পাঁচ কিলোবেজ দৈর্ঘ্যের ডিএনএ অনুপস্থিতি সৃষ্টি করে, যা Rho GTPase Activating Protein 36 (Arhgap36) নামক একটি জিনের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ ঘটায়। একক-সেল আরএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিড়ালের ত্বকে থাকা লাল-হলুদ চুলের কারণ হলো মেলানোজেনিক জিনের কার্যক্রম কমে যাওয়া। সাধারণত এই জিনগুলো Mc1r-cAMP-PKA পথ দিয়ে সক্রিয় হয়, কিন্তু এখানে তা বাধাগ্রস্ত হয়।
বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, এই জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে Melanocyte কোষে Arhgap36 জিনের উচ্চ কার্যক্রম দেখা যায়। এটি প্রোটিন কিনেস এ (PKA) ক্যাটালিটিক সাবউনিটের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে, এই মিউটেশনটি Mc1r পথের নিচের স্তরে কাজ করে এবং এর মাধ্যমে বিড়ালের অনন্য রঙের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার জেনেটিসিস্ট ক্যারোলিন ব্রাউন এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এটি সঠিক জিন এবং আমি খুশি। এটি এমন একটি প্রশ্ন, যার উত্তর আমি সবসময় খুঁজতে চেয়েছিলাম।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যালিকো ও টরটিসশেল বিড়ালের রঙ নিয়ে আকৃষ্ট ছিলেন। সাধারণত কালো ও কমলা বিড়ালের সন্তান থেকে এই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। বৈশিষ্ট্যটি প্রায়শই নারী বিড়ালে দেখা যায়, কারণ কালো বা কমলা রঙের জন্য দায়ী জিনটি X ক্রোমোজোমে অবস্থিত।
পুরুষ বিড়ালের ক্ষেত্রে তারা একটি মাত্র X ক্রোমোজোম পায়, যা মা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আসে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র গারফিল্ডের একমাত্র X ক্রোমোজোমটি তার মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া।
এই আবিষ্কার শুধু বিড়ালের রঙের রহস্যই উদঘাটন করেনি, বরং এটি জেনেটিক গবেষণার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।