কুকুরের কারণে কমপক্ষে ৩৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে বদলি করা হয়েছে ভারতের সিনিয়র এক সরকারি কর্মকর্তা দম্পতিকে (ব্যুরোক্র্যাট)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দিল্লির একটি বড় স্টেডিয়াম তারা দিনের শুরুতে নিজেদের দখলে রাখেন। এ সময় তারা নিজেদের কুকুরকে হাঁটাতে নিয়ে যান স্টেডিয়ামের ভিতর। ফলে অন্য কারো প্রবেশাধিকার থাকে না। এমনকি অ্যাথলেটরাও প্রবেশ করতে পারেন না। এ অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই দম্পতিকে বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন রাজধানী দিল্লিতে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সঞ্জীব খিরওয়ার এবং তার স্ত্রী রিঙ্কু দুজ্ঞা। দু’জনেই সরকারের উচ্চ পদে দায়িত্বশীল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে, এই দম্পতি সরকার পরিচালিত থিয়াগরাজ স্টেডিয়াম থেকে জোরপূর্বক সব অ্যাথলেটকে বের করে দেন, যাতে তারা তাদের পোষা কুকুর নিয়ে ভিতরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ক্ষোভ উগড়ে পড়ে। ফলে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিয়াল বৃহস্পতিবার নতুন একটি নির্দেশ ইস্যু করেন।
তাতে বলা হয়, এখন থেকে রাজধানীতে খেলাধুলার সব স্থাপনা রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। অন্যদিকে একই দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই দম্পতিকে দেশে আলাদা দুটি অংশে স্থানান্তর করা হয়। এই নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়।
সঞ্জীব খিরওয়ারকে স্থানান্তরিত করা হয় লাদাখে। অন্যদিকে তার স্ত্রী মিস দুজ্ঞাকে পাঠানো হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে। এই দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব কমপক্ষে ৩৪০০ কিলোমিটার। ওই কুকুরটির গন্তব্য কি হয়েছে তা জানা যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, থিয়াগরাজ স্টেডিয়ামের অপব্যবহারের বিষয়ে দিল্লির মুখ্য সচিবের কাছে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়। ওইদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সন্ধ্যার পরে একটি রিপোর্ট দেন দিল্লির মুখ্য সচিব। ততক্ষণে সঞ্জীব খিরওয়ারকে লাদাখে এবং তার স্ত্রী রিঙ্কু দুজ্ঞাকে অরুণাচল প্রদেশে বদলি করা হয়েছে।
ওদিকে সরকারের এত বড় কর্মকর্তা-দম্পতি (ব্যুরোক্র্যাট)-এর এমন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রাজনীতিকরাও। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর বিনয় কুমার সাক্সেনার কাছে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন দিল্লি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান আদেশ গুপ্ত। এতে তিনি সঞ্জীব খিরওয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংয়ের প্রতি অনুরোধ করেন বিরোধী কংগ্রেসের এমপি মানিশ তিওয়ারি।
যেসব অ্যাথলেট এবং রানার’কে স্টেডিয়াম থেকে তাদের প্রশিক্ষণ বন্ধ করে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল এই সমালোচনার ঝড়ের সঙ্গে তারাও যোগ দিয়েছেন। একজন অ্যাথলেট নিজেকে শুধু অমিত নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, এই স্টেডিয়ামের ট্র্যাকগুলো অ্যাথলেট ও রানার’দের জন্য সরকার বানিয়েছে। কোনো কুকুরের জন্য নয়। যদি কোনো আইএএস কর্মকর্তা বা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা এর অপব্যবহার করেন, তাহলে তা হবে অন্যায়।
ওদিকে খেলাধুলায় কোনো বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সঞ্জীব খিরওয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, মাঝে মাঝে তিনি স্টেডিয়ামে হাঁটার সময় নিজের পোষা প্রাণিকে সঙ্গে নিয়ে যান। তবে নিয়মিত কোনো অ্যাথলেটের প্রাকটিসে কোনো বিঘ্ন তিনি ঘটান না। যদি এটা আপত্তিকর হয়, তাহলে আমি সেখানে যাওয়া বন্ধ করে দেবো।
দিল্লিতে ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসের জন্য নির্মাণ করা হয় থিয়াগরাজ স্টেডিয়াম। বর্তমানে তা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রকম খেলাধুলার কাজে।