ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। প্রায় দেড় বছর আগে সাবেক অলিম্পিক ‘স্নোবোর্ডার ও ইউটিউবার ট্রেভর জ্যাকব একটি প্রপেলার বিমান থেকে লাফ দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে বিমান থেকে প্যারাশুট নিয়ে লাফ দিয়েছিলেন। তিনি একাই বিমানটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লোমপক থেকে ম্যামথ লেকসের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুরো বিষয়টিই আসলে একাটি মিথ্যা ছিল। ইউটিউবে ভিউ ও ফলোয়ার বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই স্টান্টবাজি ভিডিও করেছিলেন তিনি।
২৯ বছর বয়সী জ্যাকব বৃহস্পতিবারে এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং স্বীকারও করেছেন। শুধু তাই নয় ফেডারেল তদন্তে বাধা দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ধ্বংস করে ফেলেন তিনি। বিমানটি সান্তা বারবারা কাউন্টিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল বলে জানান ক্যালিফোর্নিয়ার কেন্দ্রীয় জেলায় অবস্থিত মার্কিন অ্যাটর্নি অফিস।
তার বিরুদ্ধে ‘ফেডারেল তদন্তে বাধা দেওয়া, বিমানের ধ্বংসাবশেষ ধ্বংস এবং গোপন করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অপরাধে তার ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের একজন মুখপাত্রের মতে, শুনানির জন্য জ্যাকব আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক আদালতে উপস্থিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ আনুষ্ঠানিক আবেদনের শুনানির কয়েক মাস পরেই তার সাজা ঘোষণা করা হবে। জ্যাকবের পাইলটের লাইসেন্সও ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল নভেম্বর ২৪, ২০২১ সালে এবং জ্যাকব ‘আই ক্র্যাশড মাই এয়ারপ্লেন’ শিরোনামের একটি ভিডিও তৈরি করেছিলেন। তখন থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছেন জ্যাকব। ভিডিওটিতে দেখা যায়, লোমপক সিটি বিমানবন্দর থেকে মসৃণ টেকঅফ করে পাহাড়ের ওপরে চলে যাচ্ছে বিমানটি। বিডিওতে জ্যাকব বলছে সে ম্যামথ লেকে যাচ্ছে।
এক পর্যায়ে তার বন্ধু জনি স্ট্রেঞ্জের ছাইও দেখায়, যে ২০১৫সালে সুইস আল্পসে লাফ দেওয়ার সময় মারা গিয়েছিলেন। ভিডিওতে প্রায় এক মিনিটের মাথায় প্লেনের প্রপেলারটি থেমে যায় এবং জ্যাকব দরজা খুলে ফেলে। এরপর তিনি বলেন বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। তিনি দরজা দিয়ে বের হয়ে প্যারাশুটসহ লাফ দেন এবং মাটিতে নামেন। ওদিকে চালিকবিহীন বিমিানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। নিচে নামার পরে তিনি বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান ধ্বংস করেন। স্থানীয় কৃষকরা কয়েক ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে।
এফএএ-এর মতে বিমান দুর্ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল এবং এটি প্রমাণ করার জন্য প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। জ্যাকবস বিমানে উড্ডয়নের আগে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন, যেটি প্রপেলারের দিকে ছিল। তিনি একটি প্যারাশুট নিয়ে লাফ দিয়েছিলেন। ইঞ্জিন নষ্ট বন্ধ হয়ে গেছে বলার আগেই বিমানের দরজা খুলে ফেলেন। তিনি ইঞ্জিন পুনরায় চালু করার চেষ্টা করেননি বা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বা অবতরণ করার জন্য নিরাপদ জায়গা খুঁজেননি। জ্যাকবস একটি সেলফি স্টিক ব্যবহার করে বিমানটি থেকে লাফ দেন। এ জন্য মন্তব্যকারীদের তিরস্কারের স্বীকারও হয়েছিলেন। বিমানের ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার এবং ধ্বংস করলেও তার ক্যামেরাগুলো কিন্তু ঠিকঠাক উদ্ধার করেছেন।
জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের রিলিজ বলছে, জ্যাকব এমন একটি কোম্পানির কাছ থেকে স্পনসরশিপ পেয়েছিলেন যার ‘ওয়ালেট’ তিনি ওই ভিডিওতে প্রচার করেছিলেন। ভিডিওটির পূর্ববর্তী সংস্করণে জ্যাকবসকে প্লেনের সামনে দাঁড়িয়ে ‘রিজ ওয়ালেট’র জন্য একটি প্রচারমূলক বিজ্ঞাপন দেখিয়েছেন। তবে রিজের প্রতিনিধিরা এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।