English

31.9 C
Dhaka
বুধবার, জুলাই ২, ২০২৫
- Advertisement -

২০২৩-এ পদার্থবিজ্ঞানের সেরা আবিষ্কারগুলো

- Advertisements -

পদার্থবিজ্ঞানবিষয়ক বিশ্বখ্যাত পোর্টাল ‘ফিজিকস ওয়ার্ল্ড’ ২০২৩ সালের সেরা দশ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের তালিকা করেছে। সেখানে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারকে স্থান দেওয়া হয়েছে। সবগুলোই এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিকসের। এর অবশ্য কারণ আছে, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হলেও, যতক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ সেগুলোকে তত্ত্ব হিসেবে দাবি করা যায়।

মানব ও বিজ্ঞানের কল্যাণে সেগুলো আদৌ কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই সালতামামি জাতীয় তালিকাতে সেগুলোর স্থান হয় না।

ফিজিকস ওয়ার্ল্ডের সেরা সেই ১০ আবিষ্কারের পাঁচটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। সঙ্গে একটি বোনাস।

কারণ টপ টেনের তালিকা করলেও ‘ফিজিকস ওয়ার্ল্ড’ ১১টি আবিষ্কারের বর্ণনা করেছে তাদের সাইটে। ১১ নম্বরটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আবিষ্কার হওয়ায় ২০২২ সালের আলোচনায় ছিল না। অথচ নিউক্লিয়ার ফিউশনের সেই আবিষ্কারটি মানবসভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে—এ বিবচনায় তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। আমরাও এখানে সবার শেষে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে মহাবিশ্বের রূপান্তর
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ‘দ্য এলগার’ কলাবেরশনের বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার কিছু প্রমাণ দেখতে পেয়েছেন। তাঁরা এই প্রমাণগুলোর সন্ধান পেয়েছেন প্রাথমিক অবস্থার গ্যালাক্সিগুলিতে, যেগুলো মহাবিশ্বের রি-আয়নাইজেশনের জন্য দায়ী। মহাবিশ্বের এই রি-আয়োনাইজেশন ঘটে বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ১০০ বিলিয়ন বছর পর। আর এই রি-আয়নাইজেশনের প্রক্রিয়ায়ই দায়ী ছিল হাইড্রোজেন গ্যাসের আয়নিত হওয়ার জন্য।
আয়নিত সেই হাউড্রোজেন গ্যাসগুলো আলো শোষণ করে এবং সেই আলোও পরবর্তী সময়ে বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাবিশ্বে; তা না হলে ওই সময়কার মহাবিশ্ব ও গ্যালাক্সিগুলো দেখার সৌভাগ্য হতো না আমাদের।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, স্থানীয় কিছু আলোক বুদবুদের কারণেই রিআয়নাইজেশন হয়েছিল, আর এই বদুবুদগুলো তৈরি হয়েছিল বিকিরণের কিছু উৎসের দ্বারা, সম্ভবত সেগুলো প্রাথমিক গ্যালাক্সির কোনো তারা ছিল। এলাগারের গবেষকেরা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে এই প্রাচীন কোয়াসার থেকে আসা আলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই  আলো এসেছিল আলোক বুদবুদ ভেদ করে এবং প্রাথমিক সেই গ্যালাক্সিগুলোই আসলে রিআয়নাইজেশনের জন্য দায়ী।

অ্যান্টিম্যাটারও মহাকর্ষ বলে সাড়া দেয়
মহাবিশ্বে সাধারণ বস্তুর পাশাপাশি কিছু অ্যান্টিম্যাটারও আছে। অ্যান্টিম্যাটারের কণাগুলোর সঙ্গে সাধারণ কণাদের অনেক মিল রয়েছে, শুধু এদের চার্জ আলাদা। যেমন ইলেকট্রনের অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতি-কণা হলো পজিট্রন। এর ভর ও স্পিন—সব ইলেকট্রনের সমান, কিন্তু চার্জ উল্টো, অর্থাৎ ধনাত্মক। অ্যান্টিম্যাটার কণাদের সচরাচার মেলে না। এদেরকে তৈরি করতে হয় গবেষণাগারে।

সাধারণ বস্তুর উল্টো চরিত্রের এই বস্তু বা কণাগুলোর ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব কেমন? বিজ্ঞানীরা জানতেন, সাধারণ বস্তুর মতোই হবে এদের মহাকর্ষীয় প্রভাব। তবু পরীক্ষাগারে প্রমাণ তো লাগবে! সেই কাজটিই এ বছর করেছেন সার্নের বিজ্ঞানীরা। তারা আলফা জি এক্সপেরিমেন্টর সাহায্যে প্রমাণ করেছেন অ্যান্টিম্যাটারও সাধারণ বস্তুর মতো মহাকর্ষীয় বলে সাড়া দেয়। তবে সাধারণ বস্তুর মতো হুবহু একইভাবে সাড়া দেয় না। এর মহাকর্ষীয় ত্বরণ সাধারণ বস্তুর মহাকর্ষীয় ত্বরণের ৭৫ শতাংশ। হুবহু এক না হওয়াতেই বরং বিজ্ঞানীদের সুবিধা হয়েছে। নতুন ও ভিন্ন আচরণের কণাও যে থাকতে পারো আমাদের চেনাজানা গণ্ডির বাইরে, সেগুলো আবিষ্কারে পথটা আসলে এ কারণেই খোলা রইল।

বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেটে মহাবিশ্বের প্রসারণ
মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে—বেশ কিছু তত্ত্ব ও প্রমাণের কারণে বিজ্ঞানীরা এখন এ ধারণা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু প্রসারিত মহাবিশ্বের চেহারাটা কেমন? অনেক কম্পিউটার সিমুলেশন হয়েছে, বিজ্ঞানীরা অনেক ছবি এঁকেছেন তত্ত্ব আর তথ্যের সমন্বয় করে। সম্প্রতি নতুন একধরেনের সিমুলেশন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন বোস-আইনস্টাইন কন্ডেনসেট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সত্যেনন্দ্রনাথ বসু ও সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের যৌথ গবেষণার ফসল হলো এই বোস-আইনস্টাইন কন্ডেনসেট। তাঁরা এই কন্ডেনসেটর ভেতর পরমাণুর বিক্ষেপণের দৈর্ঘ্য হ্রাস-বৃদ্ধি করে বোঝার চেষ্টা করেছেন মহাবিশ্বের প্রসারণ কেমন হয়। মাহবিশ্বের সার্বিক কাঠামো সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে এই সিমুলেশনের কারণে। সিমুলেশনটি যৌথভাবে করেছেন জার্মানি ও স্পেনের একদল গবেষক।

সময়ের ভেতর ডাবল স্লিট পরীক্ষা
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টমাস ইয়াং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তাঁর বিখ্যাত ডাবল স্লিট পরীক্ষার মাধ্যমে বদলে দিয়েছিলেন আলোক বিজ্ঞানের ইতিহাস। দুটি সরু ছিদ্রের ভেতর দিয়ে আলো পাঠিয়ে, সেখান থেকে পাওয়া ব্যাতিচার নকশার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন আলোর তরঙ্গ ধর্ম। এর আগে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন আলোর শুধু কণা চরিত্র আছে, যেমনটা বলেছিলেন আইজ্যাক নিউটন।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রোমান তিরোল ও রিকার্ডো স্যাপিয়েনজা তাঁদের সহকর্মীদের নিয়ে এই নতুন পরীক্ষাটি করেছেন। তাঁরা দেখেছেন স্থানের মতো সময়ের ভেতর দিয়েও পরীক্ষাটি করলে একই রকম প্রভাব দেখা যায়। একটি অর্ধ পরিবাহী আয়নায় দ্রুত পর দুবার আলো প্রতিফলিত করে পরীক্ষাটি করেছেন তাঁরা। আগের পরীক্ষাগুলোতে বিভিন্ন অবস্থানে ব্যাতিচার নকশা দেখা যেত, নতুন এই গবেষণায় বিভিন্ন কম্পাংকের মধ্যে ব্যাতিচার দেখা যায়। অপটিক্যাল সুইচ ও কম্পিউটারের অপটিক্যাল সিগন্যাল প্রসেসিংয়ের জন্য এই পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

পরমাণুর এক্স-রে ফটো
যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী একক পরমাণুর এক্স-রে ফটো তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আর্গন ন্যাশন্যাল ল্যাবরোটরি গবেষক স্ব ওয়াই হিলা ও ভলকার রোজ তাঁদের সহকর্মীদের নিয়ে এ কাজটি করেছেন।

এ কাজটি করার জন্য তার একটা ছোট্ট নমুনা বস্তু নিয়েছেন, যাতে ১০ হাজার পরমাণু ছিল। তারপর সেখান থেকে সিনকোট্রন এক্স-রের সাহায্যে এই একক পরমাণুর ছবি তুলেছেন। তাঁদের এই পদ্ধতিটি পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ কোনো বস্তুতে খুব সামন্যও যদি বিষাক্ত বা ক্ষতিকর পদার্থ থাকে, সেটা শনাক্ত করা সম্ভব হবে এই পদ্ধতির সাহায্যে।

নিউক্লিয়ার ফিউশন এনার্জি
পৃথিবীর জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে জ্বালানি বা শক্তি। তেলের ভাণ্ডার কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই হয়তো ফুরিয়ে যাবে। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য গত সাত দশক ধরেই বিশ্বজুড়ে চলছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর তোড়জোড়। বাংলাদেশও এই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বর্তমান নিউক্লিয়ার শক্তির পুরোটাই এখন জোগান দেয় নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া। কিন্তু আরেক ধরনের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া আছে, সেটাকে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া। সূর্যের ভেতর এই ফিউশন বিক্রিয়ায় সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার থেকেই জ্বলছে সূর্য, আর সেই শক্তিই পৃথিবীসহ গোটা সৌরজগতের বেশির ভাগ শক্তির জোগান দিচ্ছে। অর্থাৎ ফিশনের চেয়ে ফিউশন বিক্রিয়া অনেকে বেশি কার্যকর। অনেক বেশি শক্তি এখান থেকে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এত দিন পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো কৃত্রিম ফিউশন বিক্রিয়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা, যার সাহায্যে আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান পাওয়া সম্ভব হবে। তবে ২০২৩ সালে এসে আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

ঘটনাটা ঘটেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই। চলতি বছরও সেই ধারা অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে তিন শ কোটি ডলারের ল্যাব ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটি (এনআইএফ) ফিউশন বিক্রিয়ায় যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছে। যত ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে অতীতে, সেগুলোর বেশির ভাগেই দেখা যেত, যে পরিমাণ শক্তি খরচ করা হচ্ছে বিক্রিয়ায়, পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে কম শক্তি। কিন্তু এনআইএফের বিজ্ঞানীরা সফলভাবেই কম শক্তি খরচ করে বেশি শক্তি উৎপাদনের মতো ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত করতে পেরেছেন, যা মানবসভ্যতার জন্য হতে যাচ্ছে বড় একটি লাফ।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/35cj
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন