‘লোহার ফুসফুস’ নিয়ে বেঁচে থাকা পল অ্যালেক্সান্ডার মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা পল ‘দ্য ম্যান ইন দ্য আয়রন লাং’ নামে পরিচিত ছিলেন। অনেকে তাকে পোলিও পল নামেও চিনতেন। ছয় বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি লোহার ফুসফুস নেন, যার ওজন প্রায় ৬০০ পাউন্ড।
পলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে গঠিত ফান্ড রাইজিং পেজের বরাতে গণমাধ্যম গার্ডিয়ান সম্প্রতি এ তথ্য জানায়। ফান্ডরাইজিং ওয়েবসাইট এক পোস্টে জানিয়েছে, লোহার ফুসফুসের ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি কলেজে গিয়ে একজন আইনজীবী হয়েছিলেন।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, পোলিওতে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুর ব্যক্তি ছিলেন পল। তিনি অবিশ্বাস্য রোল মডেল ছিলেন।
১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় পোলিও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশটিতে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিল। তখনও পোলিও রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিল শিশু। সে বছরই পোলিওতে আক্রান্ত হন পল। ছয় বছর বয়সেই প্যারালাইজড হয়ে যান তিনি। তার পিতামাতা নিয়ে যান তাকে পার্কল্যান্ড হাসপাতালে। শুরুতে ডাক্তাররা জানান তাদের পক্ষে আর কিছুই করা সম্ভব না।
পল নিশ্চিতভাবেই মারা যেতেন যদি না দ্বিতীয় আরেকজন ডাক্তার তাকে বাঁচাতে এগিয়ে না আসতেন। তিনি তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান এবং জরুরি ট্র্যাকিওটমি করেন। ফুসফুস থেকে জমা ফ্লুইড বের করে আনা হয়, জীবন রক্ষা পায় তার।
কিন্তু পলের জন্য এটি ছিল এক ভয়ংকর নতুন বাস্তবতা। চোখ খুলেই দেখেন একটি বদ্ধ লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে আছেন তিনি, কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে পারছিলেন না। তারপর থেকে এই লোহার খাঁচাই তার জীবনের সঙ্গী।
তিনি ১৮ মাস ধরে সেখানে আটকে ছিলেন, পোলিও ওয়ার্ডে অন্যান্য বাচ্চাদের কান্নাকাটি শুনতে পেতেন তিনি।
পোলিওর কারণে বেশিদিন বাঁচবেন না বলে আশা করা সত্ত্বেও পল আলেকজান্ডার কয়েক দশক ধরে বেঁচেছিলেন। তবে কিছু সময়ের জন্য তিনি লোহার ফুসফুসের বাইরেও শ্বাস নিতে পারতেন, এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্রগ ব্রিথিং।
২০২০ সালে গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম আমি যদি আমার জীবন নিয়ে কিছু করতে চাই, তাহলে আমাকে মানসিক ভাবে আরও দৃঢ় হতে হবে।’
সেই বছর, তিনি একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছিলেন যা লিখতে তাঁর আট বছর সময় লেগেছিল বলে জানা গেছে। কিবোর্ডে লিখতে এবং বন্ধুকে দিক নির্দেশনা দিতে তিনি একটি প্লাস্টিকের লাঠি ব্যবহার করতেন।
পলের ভাই ফিলিপ বলেন, বইটি প্রকাশের পরই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার ভাই বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে কতটা অনুপ্রেরণা ছিলেন।