নরম ও থলথলে গঠনের কারণে একসময় ‘বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণী’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ব্লবমাছ এবার নতুন এক সম্মাননা পেয়েছে। নিউজিল্যান্ডের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন মাছটিকে ‘বর্ষসেরা মাছ’-এর খেতাব দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের মাউন্টেন টু সি কনজারভেশন ট্রাস্ট প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যা দেশটির স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এবারের আসরে ৫ হাজার ৫০০ ভোটের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ভোট পেয়ে ব্লবমাছ শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।
ব্লবমাছের এই জয় অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। ২০১৩ সালে ‘কুৎসিত প্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি’ একে তাদের মাসকট ঘোষণা করেছিল। তবে এবার নিউজিল্যান্ডের পরিবেশবাদী মহলে মাছটি নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে।
এই জেলটিনাস প্রজাতির মাছটি সমুদ্রের ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মিটার গভীরে বসবাস করে, যেখানে পানির চাপ অত্যন্ত বেশি থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় গভীর পানিতে এটি অন্য সাধারণ মাছের মতোই দেখায়। কিন্তু যখন এটি ধরা পড়ে এবং দ্রুত অগভীর পানিতে নিয়ে আসা হয়, তখনই বিকৃত ও অদ্ভুত দেখায়।
ব্লবমাছের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল অরেঞ্জ রাফি, যা স্লাইমহেড প্রজাতির একটি গভীর সমুদ্রের মাছ। শুরুতে অরেঞ্জ রাফি এগিয়ে থাকলেও, স্থানীয় রেডিও স্টেশন ‘মোর এফএম’-এর দুই হোস্ট, সারাহ গ্যান্ডি ও পল ফ্লিন ব্লবমাছের জন্য প্রচারণা চালান, যা শেষ মুহূর্তে ভোটের ফল বদলে দেয়।
বিজয়ের পর দুই রেডিও হোস্ট বলেন, ‘ব্লবমাছ এতদিন অবহেলিত ছিল, তারও আলোতে আসার সময় হয়েছে। এটি ধৈর্য ধরে সমুদ্রের তলদেশে বসে থাকে, খাবারের অপেক্ষায়। এবার আমরা চেয়েছি, ব্লবমাছও তার প্রাপ্য স্বীকৃতি পাক।’
মাউন্টেন টু সি কনজারভেশন ট্রাস্ট জানিয়েছে, এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ১০টি মাছের মধ্যে ৯টিই বিপদাপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে, যার মধ্যে ব্লবমাছ অন্যতম। গভীর সমুদ্রে ট্রলিংয়ের ফলে মাছটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।
উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে ‘বার্ড অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতাও প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়, যা সংরক্ষণ সংস্থা ‘ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড’ আয়োজন করে। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিল বিরল প্রজাতির হোইহো পেঙ্গুইন।
ব্লবমাছের এবারের জয় কেবল মজার এক ঘটনা নয়, বরং গভীর সমুদ্রের অবহেলিত প্রাণীদের সংরক্ষণের বিষয়ে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।