তমুনা মুসেরিডজে একদিন স্বপ্নে দেখলেন তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। ঘুম ভেঙেই তিনি ভারী নিঃশ্বাস ফেললেন এবং তার মাকে ফোন করলেন, যাকে তিনি তার জন্মদাতা মা বলে বিশ্বাস করতেন। তমুনা তখনও জানতেন না, একটি রূপকথার গল্পের মতো কিছু তার জীবনে ঘটতে যাচ্ছে।
এমনকি তিনি ওপাশ থেকে কেমন উত্তর পাবেন সেটা ভাবতেও পারেননি। তার মা চিৎকার করতে শুরু করে সঙ্গে সঙ্গে। চিৎকার করে বলেন- ’তিনি কোন সন্তানের জন্ম দেয়নি। তিনি আমার সঙ্গে কোন কিছু করতে চাননি।’
তমুনা আবার ফোন করেন এবং বুঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি যতটা না দুঃখ পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন।
তমুনা তারপরও পিছু হটেন নি। তিনি তার দত্তক নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। তার বাবার নাম-পরিচয় জানতে চান। যা কেবল তাকে দত্তক নেওয়া মা জানাতে পারেন।
তবে তমুনার প্রকৃত বাবা-মার সন্ধান শুরু করেন ২০১৬ সালে। তার দত্তক মা মারা যাওয়ার পর, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার সময় তার নামে একটি জন্মনিবন্ধন পত্র খুঁজে পান। কিন্তু তাতে জন্ম তারিখ ভুল লেখা, এতে তার মনে আবারও সন্দেহ নাড়া দেয় যে, তাকে আসলেই দত্তক নেওয়া হয়েছে। পরে তমুনা তার জন্মদাতা বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে ফেসবুকে একটি অনুসন্ধান গ্রুপ খোলেন।
পরবর্তীতে তিনি জর্জিয়ার একটি শিশু পাচার কেলেঙ্কারি উন্মোচন করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখতে পান- অনেক বছর ধরেই বাবা-মার কাছে মিথ্যা বলে তাদের নবজাতকদের বিক্রি করা হয়। বাবা-মাকে বলা হতো, তাদের নবজাতক মারা গেছে।
তমুনা একজন সাংবাদিক হয়েও তার নিজের রহস্য সমাধান করতে পারছিলেন না। তিনিও ভাবতেন- ছোটবেলায় হয়তো তিনিও চুরি হয়ে গেছেন তার প্রকৃত বাবা-মার কাছ থেকে।
‘এই গল্পে আমি একজন সাংবাদিক হলেও এটা আমার ব্যক্তিগত মিশন ছিল।’, বলেন তমুনা।
তবে তমুনার অনুসন্ধানে কিছুটা অগ্রগতি আসে গ্রীষ্মকালে। তিনি হঠাৎ তার ফেসবুক গ্রুপে একটি ক্ষুদেবার্তা পান জর্জিয়ার এক বাসিন্দার কাছ থেকে। তিনি বলেন, তারা এমন একজন নারীকে চিনতেন যিনি তার গর্ভাবস্থার কথা লুকিয়ে ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্ম দেন। তিনি যে তারিখটির কথা বলেছিলেন সেটি তমুনার জন্মতারিখের সঙ্গে মিলে যায়। এমনকি তারা বিশ্বাস করেন যে, ওই নারীটিই তমুনার জন্মদাতা মা।
তমুনা সঙ্গে সঙ্গেই সেই নারীকে অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু খুঁজে না পেয়ে তিনি একটি আপিল পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেন যে, কেউ নারীটিকে চিনেন কিনা।
এক নারী দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থা গোপন করেছিলেন এমন একটি নারীকে তিনি চিনেন এবং নারীটি তার নিজের চাচী। তিনি পোস্টটি ডিলিট করতে বলেন এবং ডিএনএ পরীক্ষা করতে রাজি হন।
তমুনা ফেসবুকে দেখতে পান যে নারীটি তাকে মেসেজ করেছিলো। তার পরিবারের সদস্যরাও ফেসবুকে রয়েছে। তারাই আসলে তমুনার বাবা, মা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী।
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল আসার আগেই তমুনা তার জন্মদাতা মাকে ফোন করেন। এর এক সপ্তাহ পরে যখন ডিএনএ টেস্টের ফলাফল আসে, তখন দেখতে পায় তমুনার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগকারী নারীটি আসলে তার চাচাতো বোন ছিলো। এই প্রমাণ দিয়ে তার মাকে সত্য স্বীকার করতে বাধ্য করেন এবং তার বাবার নাম জানতে সক্ষম হন। তার বাবা হলেন গুরগেন খোরাভা নামের এক ব্যক্তি।
তমুনা বলেন, ‘প্রথম দুই মাস আমার কাছে ঘোরের মতো লেগেছে। আমি ভাবতেই পারিনি, আমার সঙ্গে কি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আমি ভাবতেই পারিনি যে, আমি তাদের খুঁজে পাবো।
তমুনা পরে গুরগেন খোরাভার নাম দিয়ে ফেসবুকে দ্রুত সার্চ দেন এবং তার গল্পটি ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে দেখতে পান গুরগেন খোরাভা নামের এক ব্যক্তি তার পোস্টে লাইক করেছেন। যার বাড়িও জর্জিয়াতে। যে গল্প ওই ব্যক্তিটির সঙ্গে মিলে যায়।
তমুনা অবাক হয়ে দেখতে পেল, লোকটি তিন বছর ধরে তার বন্ধুতালিকায় ছিল। অথচ তিনি বুঝতেও পারেননি যে, লোকটিও তার গল্পের একটি অংশ।
তমুনা বলেন, ‘লোকটি জানতেনও না যে, আমার জন্মদাতা মা গর্ভবতী ছিলেন। এটি তার জন্যও একটি বড় বিস্ময় ছিল।’
তমুনা বলেন, তারা খুব দ্রুতই জর্জিয়ার জুগদিদিতে দেখা করার ব্যবস্থা করেন। তমুনা ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো তাকে দেখে অবাক হবেন। কিন্তু তমুনা দেখেন, তার জন্মদাতা বাবা বেশ শান্ত ভঙ্গিতেই বাগানে হাঁটছিলেন।
যখন ৭২ বছর বয়সী গুরগেন তার সামনে উপস্থিত হলেন, তখন তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং হাসতে হাসতে কিছু মুহূর্ত পার করেন।