মালয়েশিয়াতে অফিসের জন্য দৈনিক প্লেন যাত্রার জন্য ইন্টারনেট সেনসেশন হয়ে উঠেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী র্যাচেল কউর। কাজ ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি পুরো ভিন্ন পন্থা বেছে নিয়েছেন তিনি।
র্যাচেল এয়ারএশিয়ার ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তিনি প্রতিদিন প্লেনে করে পেনাং থেকে কুয়ালালামপুরে অফিসে যান। আসা-যাওয়া মিলিয়ে র্যাচেল দিনে মোট ৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দেন প্লেনে। আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরে পরিবারকে সময় দেন। তাই তিনি ‘সুপার কমিউটার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার পারিবারিক ও পেশাগত জীবনের সৃজনশীল সমন্বয়ের মাধ্যমে র্যাচেল সবার মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছেন।
জানা গেছে, র্যাচেল দুই সন্তানের মা। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ কিলোমিটার প্লেনে উড়ে কাজে যান, যাতে তিনি তার সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, তার সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে। তার ছেলের এখন ১২ বছর বয়স এবং মেয়ের বয়স ১১ বছর। তিনি সন্তান্দের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটাতে চান।
র্যাচেল প্রতিদিন সকাল ৪টায় ঘুম থেকে ওঠেন। সকাল ৫ টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছান। তার বিমান সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছায়, যা তাকে তার কাজ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়। অফিসে সব কাজ শেষ করার পর তিনি প্লেনে চড়ে বাড়ি ফিরে আসেন এবং প্রায় রাত ৮টায় বাড়িতে পৌঁছান। এই ব্যবস্থাটি তার জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক, কারণ তিনি প্রতিদিন রাতে তার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।
অনেকেই হয়তো জেনে অবাক হবেন, র্যাচেলের জন্য প্লেনে করে যাতায়াত করা তার অফিসের কাছাকাছি একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়ার চেয়ে সস্তা। তাছাড়া, এই যাতায়াতের মাধ্যমে তিনি খাবার এবং বাসস্থান খরচেও সাশ্রয় করছেন। আগে, অফিসের কাছাকাছি থাকার জন্য তিনি মাসে প্রায় ৪৭৪ ডলার খরচ করতেন। বর্তমানে, তার খরচ কমে ৩১৬ ডলার হয়েছে বলে জানিয়েছে ইটি রিপোর্ট। তাই, এই যাতায়াতের রুট শুধু তার পারিবারিক জীবনকে উন্নত করেনি, বরং তার আর্থিক খরচও কমিয়েছে।
র্যাচেলের দাবি, আগে ঘরভাড়া, খাওয়া ও অন্যান্য হিসাব মিলিয়ে যেখানে তার মাসে ভারতীয় মুদ্রায় ৪১ হাজার রুপি খরচ হত। কিন্তু এখন বিমানে গেলেও অন্যান্য হিসাব ধরলে তাঁর মাসে খরচ হয় ২৭ হাজার রুপি।
প্লেনে থাকার সময় তিনি সঙ্গীত শোনেন, তার জীবন নিয়ে ভাবেন এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই শান্ত মুহূর্তগুলো তাকে কাজ ও পারিবারিক জীবনের মাঝে এক ধরনের মানসিক শান্তি দেয়, যা একটি ব্যস্ত দিনের আগে এবং পরে খুবই কার্যকরী হয়ে ওঠে।