রাজস্থানের ‘পুষ্কর মেলা’ বা উত্তরপ্রদেশের মিরাটে ‘অল ইন্ডিয়া ফারমার্স ফেয়ার’ প্রতিটি কৃষি মেলাতেই একটাই নাম- ‘আনমোল’। আর হবে না কেন? তার ওজন প্রায় দেড় হাজার কেজি। প্রায় দানব আকৃতির এই মহিষই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার আকার, বংশ পরিচয়, প্রজনন ক্ষমতার জন্য ৮ বছরের মহিষটি ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেনসেশন হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, তার মূল্যও (২৩ কোটি রুপি) যেকোনো বিলাসবহুল গাড়ি কিংবা অভিজাত ফ্লাটের দামকেও হার মানাবে। ফলে সেদিক থেকেও দেশটির প্রাণিসম্পদ সেক্টরে গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সিরসায় জন্ম নেওয়া এই মহিষ।
‘আনমোল’ নামের মহিষটির বিলাসবহুল জীবনযাত্রার খরচও নেহাত কম নয়। তার মালিক গিল জানিয়েছেন, মহিষের ডায়েটে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ রুপি খরচ করেন, যার মধ্যে রয়েছে শুকনো ফল এবং উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবারের মিশ্রণ, যা মহিষটির স্বাস্থ্য এবং শক্তি বজায় রাখতে পারে। তার খাবারের মেনুতে রয়েছে ২৫০ গ্রাম বাদাম, ৩০টি কলা, ৪ কেজি ডালিম, ৫ কেজি দুধ এবং ২০টি ডিম। এছাড়াও খৈল, সবুজ পশুখাদ্য, দেশি ঘি, সয়াবিন এবং ভুট্টাও দেওয়া হয়। এই বিশেষ খাদ্য তালিকার কারণেই ‘মহিষটি’ সর্বদা যেকোনো প্রদর্শনী এবং প্রজননের জন্য প্রস্তুত।
তবে শুধু খাদ্যই নয়, মহিষটির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন গ্রুমিংও করা হয়। মহিষটিকে দিনে দুইবার গোসল করানো হয়। বাদাম এবং সরিষার তেলের একটি বিশেষ মিশ্রণ গায়ে মাখিয়ে মহিষটির শরীর চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর রাখা হয়। যথেষ্ট খরচস্বাপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও, নিজের প্রিয় পৌষ্য মহিষের সর্বোত্তম যত্ন প্রদানের জন্য সর্বস্ব দিয়ে যাচ্ছেন তার মালিক গিল। এমনকি যদি মহিষটিকে যত্ন করতে, তার খরচ বহন করতে, অতীতে এর মা এবং বোনকে বিক্রি করতেও দ্বিধা করেনি গিল। যেখানে মহিষটি মা প্রতিদিন প্রায় গড়ে ২৫ লিটার দুধ উৎপাদন করতো।
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের এই মহিষের দাম বর্তমানে ২৩ কোটি রুপি। এই ঊর্ধ্ব দামের পেছনে রয়েছে মহিষটির চিত্তাকর্ষক আয়তন এবং ডায়েট চার্ট। আর ঠিক এই কারণেই গবাদি পশুর প্রজননে মহিষটির এত চাহিদা। সপ্তাহে দুইবার এর বীর্য সংগ্রহ করা হয়- কারণ প্রজননকারীদের মধ্যে এর খুব ভালো রকম চাহিদা রয়েছে। প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ বীর্যের মূল্য ২৫০ রুপি এবং সেই বীর্য দিয়ে ৩০০ থেকে ৯০০ গবাদি পশুর প্রজননে ব্যবহার করা হয়। ফলত বীর্য বিক্রি থেকেই গিলের মাসিক আয় ৪-৫ লাখ রুপি। আর এই অর্থ থেকেই প্রিয় মহিষ আনমোলের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করা হয়।
মহিষটিকে কেনার জন্য কেউ কেউ তার দাম হাঁকিয়েছেন ২৩ কোটি রুপি। কিন্তু আনমোলকে তাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই দেখেন মালিক গিল। ফলে এখনই তাকে খদ্দেরের হাতে তুলে দিতে রাজি নয় গিল বা তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।