আজীবন ভিক্ষা করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্যানাল ইস্ট রোডের ভাঁড়পট্টির বাসিন্দা সুধীর দত্ত। মৃত্যুর পর তাঁর প্রচুর পরিমাণ সম্পদের খবর বেরিয়ে এসেছে। অবশ্য তাঁর ছেলেরা বিষয়টি আরো চার বছর আগেই জানতে পেরেছিলেন। বাবাকে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন দুই ছেলে।
মারা যাওয়া ওই ভিক্ষুকের নামে পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে বেশ কিছু টাকা। দুটি বেসরকারি ব্যাংকে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ রয়েছে। জীবন বীমা এবং ডাকঘরের সঞ্চয়ও আছে। এ ছাড়াও বাড়িতে নগদ ১৫ হাজার টাকা, তিনটি সোনার আংটি এবং একটি স্মার্টফোন পাওয়া গেছে! সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ টাকা।
এত টাকা থাকার পরেও তিনি ভিক্ষা করতেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, ওই সম্পদ তিনি গড়েছেন শুধু ভিক্ষা করেই।
তদন্তে অংশ নেওয়া একজন পুলিশকর্মী বলেছেন, বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা ছিল না। ফুটপাতের হোটেলেই ছিল বিনা পয়সায় খাওয়ার ব্যবস্থা। প্রতিদিন ময়লা, ছেঁড়া পোশাক পরে বেরিয়ে পড়তেন বৃদ্ধ। ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা ধরে ধরে হাঁটতেন। মুখ-চোখ এতটাই শীর্ণকায় ছিল যে, মনে হতো কোনো গভীর অসুখে ভুগছেন। যত দূরেই চলে যেতেন, ঠিক ফিরে আসতেন বিনা খরচে। বৃদ্ধ ভিখারির কাছে ভাড়া কেউ চাইত না। শান্ত ভঙ্গিতে হাতটা বাড়িয়ে দিলে কয়জনই বা মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেন?
শুধু ওই বৃদ্ধই নন, কলকাতা শহরে আরো অনেকেই ভিক্ষা করে চলেন। একাধিক সরকারি প্রকল্পে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নিয়ে তাঁদের বেশির ভাগেরই উৎসাহ নেই।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, সে দেশে ভিখারির সংখ্যার দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে ওপরের দিকে রয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে ভারতে ভিখারির সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৩ হাজার ৬৭০ জন। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ভিখারির সংখ্যা ৮১ হাজার ২২৪ জন।
সমাজতাত্ত্বিকরা বলেছেন, অর্থের লোভে ভিক্ষা করার পথে হাঁটার মতো মানুষ যেমন অনেক রয়েছে, নিরুপায় হয়ে এই পথে আসার সংখ্যাও কম নয়। যাদের কাছে হয়তো ভিক্ষা করাই একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্ম যত বেশি করে মা-বাবা বা পরিবারের অন্য বয়স্কদের দায়িত্ব নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে, ততই বাড়ছে ভিক্ষা করার ওপর নির্ভরতা।