অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে এক বছর আগে রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া একটি বিশাল গ্রেট হোয়াইট শার্কের হত্যাকারীর পরিচয় অবশেষে উদ্ঘাটিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে, কিলার হোয়েল এবং ব্রডনোজ সেভেনগিল শার্কের আক্রমণের ফলেই শার্কটি নিহত হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার পোর্টল্যান্ডের পশ্চিমে কেপ ব্রিজওয়াটার এলাকায় অক্টোবর ২০২৩ সালে একটি মৃত গ্রেট হোয়াইট শার্ক পাওয়া যায়। শার্কটির দেহে বড় আকারের কামড়ের দাগ ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুপস্থিত ছিল। শার্কটির মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চললেও সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, এটি প্রকৃত শিকারির আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
গবেষণা থেকে জানা যায়, শার্কটির কামড়ের দাগে কিলার হোয়েলের ডিএনএ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, কিছু অংশে সেভেনগিল শার্কের ডিএনএ-ও মিশে ছিল, যা ওই শার্কের মৃতদেহে খাদ্যের জন্য হামলার ইঙ্গিত দেয়। গবেষকরা উল্লেখ করেন, কামড়ের ধরণ কিলার হোয়েলের দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে লিভার তুলে নেওয়ার পদ্ধতির সাথে মিলে যায়।
কিলার হোয়েলের খাদ্যতালিকায় সাধারণত মাছ, পেঙ্গুইন এবং সি লায়ন থাকে। তবে, তারা মাঝে মাঝে অন্যান্য শিকারিদেরও আক্রমণ করে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংগৃহীত ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কিলার হোয়েল দলবদ্ধভাবে হোয়াইট শার্ক বা হোয়েল শার্কের মতো বড় শিকারিদের আক্রমণ করতে পারে।
এরা প্রথমে শিকারটির তলপেটে আঘাত করে এবং রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দুর্বল করে। তারপর, শিকারটিকে পিঠের ওপর ভাসিয়ে রেখে ডুব দিয়ে পালানোর সুযোগ আটকে দেয়। একবার শিকারটি রক্তক্ষরণে মারা গেলে, তারা ভেতরের লিভার বের করে খেয়ে ফেলে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শার্কটির দেহে পাওয়া ডিএনএ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, নমুনা সংগ্রহ করা হয় মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। এই গবেষণা শার্ক প্রজাতি এবং সামুদ্রিক পরিবেশে শিকার-শিকারির সম্পর্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।
শার্কটির মৃতদেহ প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা আবিষ্কার করে। দেহের অস্বাভাবিক অবস্থা এবং আঘাতের দাগ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। কেউ কেউ এটিকে ভিনগ্রহীদের কাজ বলেও রসিকতা করেন। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণ রহস্যের প্রকৃত কারণ স্পষ্ট করেছে। এটি শার্ক এবং সামুদ্রিক জীবনের ওপর কিলার হোয়েলের প্রভাব সম্পর্কে নতুন জানার উৎস খুলে দিয়েছে বলে গবেষকরা মনে করেন।