নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যৌনতার জন্য সঙ্গীর খোঁজে একটি পুরুষ হাম্পব্যাক তিমি (কুঁজো তিমি) অন্তত তিনটি মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে কলম্বিয়ার উপকূল থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের জাঞ্জিবার উপকূলে শেষ হয় তিমিটির যাত্রা। এই যাত্রা পৃথিবীজুড়ে ১৩ হাজার ৪৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের সমান।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট শিক্ষার্থী এবং গবেষণার সহ-লেখক টেড চিজম্যান লাইভ সায়েন্সকে বলেন, তিমিটি সম্ভবত কলম্বিয়া থেকে পূর্ব দিকে সাঁতার কেটে দক্ষিণ মহাসাগরে বিদ্যমান স্রোতের উপর চড়ে এগিয়ে চলে। এটি একটি খুব উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কার ছিল।
চিজম্যান বলেন, এই বিস্ময়কর দূরত্ব অতিক্রম করা তিমিটি পথিমধ্যে বেশ কয়েকটি তিমির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
হাম্পব্যাক তিমিগুলো সাধারণত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য এবং দীর্ঘ পথ সাঁতার কাটার জন্য পরিচিত। এরা সাধারণত অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তিমির সঙ্গে মেশে না।
নতুন গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা যাত্রা দেখায়, সবশেষ রেকর্ডে একটি স্ত্রী হাম্পব্যাক তিমি ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ব্রাজিল থেকে মাদাগাস্কার পর্যন্ত ৯ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছিল। নতুন গবেষণায় পুরুষ হাম্পব্যাকটি এক প্রজনন অঞ্চল থেকে অন্য প্রজনন অঞ্চলে ভ্রমণ করার সময় দূরত্বের নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।
তানজানিয়া সিটাসিয়ানস প্রোগ্রাম এবং মোজাম্বিকের বারাজুতো সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক স্টাডিজের সাথে কাজ করা জীববিজ্ঞানী একাতেরিনা কালাশনিকোভা লাইভ সায়েন্সকে বলেন, আমরা অভিনব এই আচরণ নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এ থেকে হাম্পব্যাক তিমির বাস্তুশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যায়।
গবেষকরা ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তোলা ছবিগুলোর উপর ভিত্তি করে নতুন গবেষণাটি করেছেন। জীববিজ্ঞানী কালাশনিকোভা বলেন, ছবিতে একই যৌন পরিপক্ক পুরুষকে কলম্বিয়ার দুটি স্থানে এবং পাঁচ বছর পরে জাঞ্জিবার চ্যানেলে দেখা গেছে। প্রতিবারই এ প্রজাতির তিমিদের একটি দল অন্য প্রজনন অঞ্চলে প্রবেশের জন্য প্রতিযোগিতা করে। তাদের এই যাত্রার অনুপ্রেরণা মূলত যৌনতা।
তিমির অস্বাভাবিক এসব অভিযানের অন্যান্য কারণও থাকতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেক করা হয়। এর মধ্যে পরিবেশগত পরিবর্তন অন্যতম, যার ফলে খাদ্য সংকট প্রভাবিত হয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং অঞ্চলে হ্যাম্পব্যাক তিমির জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলেও প্রজনন মরসুমে পুরুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতা পড়ে যায়।