ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ চলে গেলেও এর দগদগে ঘা যায়নি সুন্দরবনে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে সুন্দরবনের অসংখ্য হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে ভেসে আসছে মৃত প্রাণী। ঝড়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের হরিণ, বানর, বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছে বনবিভাগ। এ পর্যন্ত সুন্দরবনের কটকা এলাকা থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।
এখনও বন জুড়ে তল্লাশি চলছে, তাতে মৃত হরিণসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। এছাড়াও আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী।
এছাড়া রিমালের তাণ্ডবে বনের ভিতরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠা পানির পুকুর ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লবন পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ অন্য বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাটের মোংলার কানাইনগর এলাকায় একটি মৃত হরিণ শাবকের মরা দেহ ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়। এর আগে, গতকাল সোমবার দুবলার চর এলাকা থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জলোচ্ছ্বাসে মারা গেছে হরিণ দুটি।
এ বাদেও অন্য প্রাণীর জীবনও সংকটে পড়েছে বলে ধারণা করছে বন বিভাগের কর্মকর্তাসহ এ এলাকার আশপাশের মানুষ ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘সুন্দরবনের দুবলা, কটকা, কচিখালিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে সুন্দরবন থেকে ১৭টি জীবিত হরিণ ও দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছি। আমাদের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
সুন্দরবনে অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার মতো তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।’
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বনসংরক্ষণ কর্মকর্তা নূরুল করিম (ডিএফও) বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সুন্দরবনের বিস্তীৃর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে পানির অস্বাভাবিক চাপ ছিল।
জোয়ারের পানি সুন্দরবনের সব নদ-নদীতে প্রবাহিত হয়। সেই পানির উচ্চতা ছিল পাঁচ থেকে আট ফুট পর্যন্ত। সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বনের প্রাণীকূলের আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় প্রাণীকূলের প্রাণহানির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে তবে কি পরিমাণ প্রাণহানী হয়েছে তা এখননি বলতে পারছি না। আমাদের কর্মী বাহিনীরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে।’
এদিকে, রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে বাগেরহাট জেলার ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা।এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।