সব ধরনের পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়ে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গতকাল (২৫ জানুয়ারি) থেকেই এ নিয়ে কাজ শুরুর কথা বলেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ কর্মসূচিগুলো পড়ে শোনান। পরে এগুলোর ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী।
১০০ দিনের কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হিসেবে বায়ুদূষণ ও উর্বর মাটি ক্ষয়ের জন্য প্রধানত দায়ী ঢাকার চারপাশের ৫০০টি প্রচলিত ইটভাটাও ধ্বংস করা হবে এসময়ের মধ্যে। পাশাপাশি পরিবেশসম্মত ব্লক ইটের সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আইন হালনাগাদ করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকরভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ক্ষয়ক্ষতি তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) থেকে আগামী পাঁচ বছরে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪-এ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশ সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং এ মন্ত্রণালয়ের বর্ণিত চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ১০০ কর্মদিবসের এই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার জনবল কাঠামো হালনাগাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও ও সিএসওদের নিয়ে একটি ‘পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক’ গঠন করা হবে। আসন্ন বাজেটে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ থিম অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) প্রস্তাব পাঠানো হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর পরিবীক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমি রক্ষার্থে সরকারি নির্মাণে শতভাগ ব্লক ব্যবহারে সংশোধিত রোডম্যাপ অনুমোদন করা হবে। বায়ুদূষণের প্রতিটি উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ মোকাবিলায় ন্যূনতম একটি করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বায়ুদূষণ রোধে ন্যূনতম ৫০০ অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ হালনাগাদকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: ন্যাশনাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্লাস্টিকদূষণ থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তালিকা করা হবে। পণ্য প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকরভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সচিবালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে। অন্য সরকারি অফিসগুলোতে একই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। পরিবেশদূষণ রোধে প্রতি বিভাগে দুটি করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত স্কুল ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন ও উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রতি বিভাগে দুটি করে ‘জিরো ওয়েস্ট ভিলেজ’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: স্কুল-কলেজের সিলেবাস বা পাঠ্যবইয়ে সবুজায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাহাড়, টিলা ও প্রাকৃতিক জলাধারের ম্যাপিং শুরু করা হবে। পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সবুজ ক্যাটাগরিভুক্ত ছাড়পত্র ‘সেলফ অ্যাসেসমেন্ট’-এর আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। জবরদখল হয়ে যাওয়া ৫০ হাজার একর বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব প্রস্তুত করা এবং তা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। পরিবেশ দূষণের দায়ে ক্ষতিপূরণের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন: অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে এবং মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আগামী এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান এক্সপো আয়োজন করা হবে। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের গাইডলাইন প্রণয়ন করা হবে।