সুন্দরবনে লাগা আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৪ মে) বিকেল চারটার সময় আগুন নেভানো কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তারা।
এর আগে সোমবার সকাল ৯টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ২৪নম্বর কম্পার্টমেন্টের দাসের ভারাণী টহল ফাঁড়িসংলগ্ন বনে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় অগ্নিকাণ্ড এলাকায় পাইপ লাইন বসাতে এই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূর থেকে মরা ভোলা নদীতে পাইপ বসিয়ে সেখান থেকে পানি নিতে হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেড বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ড্রোনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড এলাকা পর্যবেক্ষণ করে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছে বনবিভাগ। ইতিমধ্যে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ শুরু করেছে বনবিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।
এদিকে, আগুনে কি পরিমাণ বনভূমি পুড়েছে, এ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। ঘটনার প্রথম দিন (সোমবার) দুই একর বনভূমির লতাগুল্ম পোড়ার কথা স্বীকার করেছে বনবিভাগ। অথচ, পুরো একরাত আগুন জ্বলার পরও ঘটনার পরেরদিন এসে তারা বলছে এক একর বনের কিছু লতাপাতা পুড়েছে। এ নিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাত্তার দুপুর ২টার দিকে জানান, আগুনে ১০ একরেরও বেশি বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে গেছে। ঝরা পাতার স্তর অনেক গভীরে থাকায় আগুন মাটির নিচ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে আগুন উপরের দিকে না উঠে সমতল থেকে বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে অগ্নিকাণ্ড এলাকায় বড় গাছপালা থাকলেও সেগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আফজাল চাররাসির মতে, আগুনে ৬-৭ একর বনের ছোট গাছপালা পুড়ে গেছে। বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে তারা শতাধিক গ্রামবাসী আগুন নেভানোয় সহযোগিতা করেছেন।
বনবিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এক থেকে দেড় একর বনভূমির লতাপাতা পুড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাবাসীর সহযোগতিায় আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়েছে। আগুনে কোনো বন্য প্রাণি বা বড় কোনো গাছপালার ক্ষতি হয়নি। ড্রোনের মাধ্যমে আগুন সনাক্ত করে সেখানে পানি ঢালা হয়েছে। আগুন নিভে গেলেও ঘটনাস্থল বনবিভাগের নজরদারিতে রয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার ব্রিগেডের উপ সহকারী পরিচালক (এডি) গোলাম সরোয়ার বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ফায়ার ব্রিগেডের তিনটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দুই দফা স্বস্তির বৃষ্টিতে আগুনের ভয়াবহতা কমে আসায় আগুন নেভাতে অনেকটা সহজ হয়।
পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। অল্প পরিমাণ বনের ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা সম্ভব হবে।