দেশে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতকালের স্থায়িত্ব কিছুটা কম হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। সেই সঙ্গে শীত মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় তাপমাত্রাও কিছুটা বেশি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
দেশের সার্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমন আভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলা ষড়ঋতু অনুযায়ী পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) দুই মাসকে শীতকাল ধরা হয়। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস সময়কে শীতকাল বা শুষ্ক মৌসুম ধরে থাকে। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের অনুভূতি ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়।
তবে কয়েক বছর ধরে শীতের ব্যাপ্তিতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। শীতের সময় যেহেতু কমে গেছে, তাই শৈত্যপ্রবাহের সময়ও কমে গেছে। অন্যদিকে গরমের সময়টা বেড়ে গেছে। গরমকালে আগে যে তাপপ্রবাহ দেখা যেত, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
গত ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এসে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমে রূপ নেয়। এর প্রভাবে নভেম্বরের শেষদিকে ও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রায় পুরোটা জুড়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি ছিল। তবে গত দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় আকাশের মেঘ ও বাতাসের জলীয় বাষ্প কেটে যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এতে দু-এক দিনের মধ্যে দেশে শীত পরোপুরি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এ বছর শীতের বিলম্বের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাগরে বেশ কম সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটা লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ মিগজাউম নভেম্বরের শেষ দিকে উৎপত্তি হয়ে ডিসেম্বরের প্রায় প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলল। এতে তাপমাত্রা বেশি ছিল। তবে এর (ঘূর্ণিঝড়) প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে। এখন সারা দেশেই মেঘ কেটে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা কমে আসবে। শীতও শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার শীতের সময়কাল স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। কিন্তু অন্যান্যবারের মতো শীতের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো থাকবে। এবারও ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জানুয়ারি মাসেও একাধিক শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।’
চলতি বছর আবহাওয়ার একটি বিশেষ ধরন এল নিনো সক্রিয় থাকায় শীত মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। কিন্তু সেটা ঠিক কতটা বা কত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এল নিনোর কারণে বিশ্বের আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ থাকে। এর অর্থ এই নয় যে এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকবে বা শীতের অনুভূতি অনেক কম হবে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। এবার শীতেও তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকবে। এর মূল কারণ অবশ্যই এল নিনো।’