আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস। হাতিদের রক্ষা করার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাবিশ্ব হাতি দিবস পালন করা হয়।
নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ বনে টিকে রয়েছে এশীয় হাতি। রাঙামাটি উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগে অন্তত ৫৪টি হাতির সন্ধান পাওয়া যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত কাচালং স্টেশন অফিসার সজীব মজুমদারের মতে, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এসব হাতি এখানে বিচরণ করছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৩-৪টা হাতির শাবক জন্মেছে। হাতির পালের সঙ্গে শাবকদের হাঁটতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ৪৩টি হাতি রয়েছে বলে জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ শোয়াইব খান। এর মধ্যে তিন হাতির শাবকও রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি রাঙামাটি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে চিরসবুজ বনে এসব এশীয় হাতির বিচরণ দেখা গেছে। রাঙামাটির বরকল ও লংগদু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাতিদের বিচরণ চোখে পড়ে। মূলত এদের আদি আবাস পাবলাখালী বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। সংরক্ষিত বন থেকে বের হয়ে এরা পাহাড়ি বনে ছড়িয়ে পড়েছে। হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়া, আবাসস্থলের গাছপালা কাটা, বনে আগুন দেওয়া, কৃষি ও জুমচাষ করা, মানুষের বসতি নির্মাণ হওয়ায় হাতির চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বরকল উপজেলার বাসিন্দা মো. সোহরাব হোসেন জানান, ১০ লাখ টাকা খরচ করে বাগান করেছি। কিন্তু হাতি বাগানের ওপর দিয়ে চলাচল করার কারণে এতে আমার অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। হাতি একাধিকবার আমার বসতবাড়িতে হামলা করেছে। আমরা হাতি অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এখন রাঙামাটি শহরে বসবাস করছি। গত মাসে আমরা বসতবাড়ির লাগোয়া রসুই ঘর হাতি আক্রমণ করে ভেঙে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, হাতি আক্রমণ করে আমার বাড়ি ১০ বার ভেঙেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা এখানে কীভাবে বসবাস করব।
এ ছাড়া গত দুই বছরে কেবল কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান এলাকায় হাতির আক্রমণে ৮ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় বর্তমানে হাতির সংখ্যা প্রায় ১১টি। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ। মানুষের মাঝে হাতি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, বাচ্চা জন্মানোর সময় এবং পরে মা হাতি অত্যন্ত সতর্ক ও আক্রমণাত্মক হয়। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বা ফসলের ক্ষেতে প্রবেশ করে। তবে বনের ভারসাম্য রক্ষায় হাতির কোনো বিকল্প নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ শোয়াইব খান জানান, হাতি যাতে লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সোলার ফেন্সিং দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের পর হাতির আক্রমণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা হয়নি বলে দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা।
এ ছাড়া বন বিভাগের উদ্যোগে হাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ইআরটি (এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম) গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ পরিবারকে বন বিভাগ ১৮ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটায় কমে এসেছে বলে মনে করছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বন বিভাগ বরাবর আবেদন করলে যাচাই বাছাই শেষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।