English

19 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

শেষ ইচ্ছে পুরোন হলো না মাসুম আজিজের

- Advertisements -
মুরাদ হোসেন: মাসুম আজিজের শেষ ইচ্ছে ছিল তার বসতভিটায় শান্তি নিকেতনের আদলে গড়ে তুলবেন “গৌরী প্রসন্ন মজুমদার স্মৃতি পরিষদ”। যেখানে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা প্রশাখা থাকবে। পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় তাঁর নিজস্ব বসতভিটা তিনি এ উদ্দেশে গৌরী প্রসন্ন মজুমদার স্মৃতি পরিষদকে মৌখিকভাবে দান করে যান। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর তাঁর পুরনো হলো না।

সোমবার দুপুর ২. ৪৫ মিনিটে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী – সাবিহা জামান, ছেলে উৎস জামান ও মেয়ে প্রজ্ঞা আজিজ সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

১৯৫৩ সালের ২২ অক্টোবর পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মাসুম আজিজ ১৯৭২ থেকে নাট্যচর্চা শুরু করে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ওই বছরই প্রয়াত আবু তাহেরের প্রযোজনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রাচী নাটকের একটি মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর টেলিভিশন অভিনয়ের শুরু। তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন টেলিভিশনসহ শিল্পের প্রায় প্রতিটি শাখায়।

১৯৮৫ সালে মাসুম আজিজ তালিকাভুক্ত হন বেতারে। একই সাথে নাট্যশিল্পী এবং নাট্যকার হিসেবে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত নাট্যকার ছিলেন। ২০০৪ সালে উত্তম আকাশের পরিচালনায় ‘মমতাজ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে প্রয়াত কাজী মোর্শেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘ঘানি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য ২০০০ সালে ‘একজন আয়নাল লস্কর’ নাটকে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো সমালোচনা পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ‘একজন আয়নাল লস্কর’ নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়া ‘বিরস গল্প’ নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার এবং হুমায়ন আহমেদের ’২৪ ক্যারটম্যান’ নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তিনি ঝিলিক চ্যানেল আই ঈদ অনুষ্ঠানমালা পুরস্কার লাভ করেন।

২০১১ সালে প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুর রচনা ও পরিচালনায় ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত সাইলেন্ট রিভার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মাসুম আজিজকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান দেয়। একই বছর ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন।

২০২২ সালে শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। পাবনার বিশিষ্টজন মো. মহিউদ্দিন ভুঁইয়া জানান, একুশে পদক পাওয়ার পর প্রথম তাঁকে সংবর্ধনা দেয় পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন যেদিন (৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২) তাঁকে সংবর্ধনা দেন সেদিনই তাঁর মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।

সংগীত-ই ছিল মাসুম আজিজের প্রথম পছন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সাংস্কৃতিক জীবন শুরু করেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। ঘটনাচক্রে এক সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়। মঞ্চনাটক দিয়েই তাঁর নাট্যচর্চার শুরু। তিনি মঞ্চকেই তাঁর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূলপ্লাটফরম বলে মনে করতেন। তিনি নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের সদস্য হিসেবে মঞ্চ নিয়েই বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করতেন।

আশির দশকে ঢাকার মঞ্চে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রযোজনায় তিনি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে ঢাকার দর্শকদের মন জয় করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ড. জামিল আহমেদের পরিচালনায় নিকোলাই গোগোলের বিখ্যাত নাটক গভর্নমেন্ট ইনস্পেকটর এর বাংলা রূপান্তর ‘ইনস্পেকটর জেনারেল’, ‘রাক্ষস খোক্কস’, ‘বিষাদ সিন্ধু’; এসএম সোলায়মানের রচনা ও পরিচালনায় ‘এই দেশে এই বেশে’, ‘আমিনা সুন্দরী’।

মাসুম আজিজ নির্মাতা ও নাট্যকার হিসেবেও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। নাটক ও চলচ্চিত্র অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটক রচনা ও পরিচালনা করতেন। ১৯৮৫ সাল থেকে তাঁর নাটক পরিচালনা শুরু। চারপাশের মানুষ আর জীবন দেখে, জীবনের গভীরে প্রবেশ করে তিনি নাটক লিখতে শুরু করেন।

মাসুম আজিজের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক : কাকাতুয়া, ছেড়া তমশুক, সিন্ধু সারস, কদম আলী বয়াতি, ইতুনী, বিরস গল্প, হেলিকপ্টার, পাগলা ঘন্টা, আবদুল কুদ্দুস- একটি অসমাপ্ত গল্পের নায়ক, বাবলা কাঠের গলুই ইত্যাদি। মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্র নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা।

তিনি সরকারি অনুদানে ‘সনাতন গল্প’ নামে তারই রচনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুদানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্প আপদ অবলম্বনে তাঁর নাট্যরূপ ও পরিচালনায় ‘আপদ’ নাটকটি এখন তাঁর দল ঢাকা পদাতিক থেকে মঞ্চস্থ হয়।

কদম আলী বয়াতি, বিরস গল্প, একজন আয়নাল লস্কর, উড়ে যায় বকপক্ষী, অচিন রাগিনী প্রভৃতি নাটকে মাসুম আজিজের সাবলীল অভিনয় এখনো দাগ কাটে দর্শকের মনে।

আমরা এই গুণীশিল্পীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমিন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন