English

26 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
- Advertisement -

শুক্রবারের আনন্দময় বিকেল বিষাদে পরিণত হয়েছিল সালমানের মৃত্যুর খবরে

- Advertisements -

নাসিম রুমি: নব্বই দশকে সালমান শাহ ছিলেন শোবিজ আইকন। বিভিন্ন সময় এ কথাটি সামনে আসে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডের সিনেমাতেও সালমান শাহকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল এ সময়ের এক অভিনেতাকে। আজ এই অভিনেতার প্রয়াণ দিবস। ১৯৯৬ সালের এক শুক্রবারের আনন্দময় বিকেল বিষাদে পরিণত হয়েছিল সালমানের মৃত্যুর খবরে।

সম্প্রতি দেশ রূপান্তরের সঙ্গে এক আলাপনে ছিলেন সালমান অভিনীত ‘জীবন সংসার’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু। সালমানের ফ্যাশন সচেতনতা নিয়ে এই নির্মাতা বললেন, সালমান শাহ যেন সময়ের আগেই চলেন। সালমান শাহ শোবিজ তারকাদের মধ্যে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। জীবন সংসার শুটিংয়ের সময় তিনি মোবাইল ফোন নিয়ে আসতেন। তখন চলচ্চিত্র জগতের কারও হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। সালমান শাহ হালফ্যাশনে সবার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকতেন। চলচ্চিত্রে ‘ফ্যাশন’ বিষয়টিকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফ্যাশনেবল গাড়ি, বাইক ব্যবহার করতেন সালমান শাহ।

অভিনেতা সালমান কেমন ছিলেন? এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন রাজু বলেন, রাজ্জাক ভাইয়ের পরে এ দেশের চলচ্চিত্রে একমাত্র সালমানই অভিনয়ে স্বকীয় ধরন তৈরি করতে পেরেছিলেন। দর্শকদের হলমুখো করতে সমর্থ হয়েছিলেন সে। সালমানকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে নিজে পরামর্শ দিতেন। তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতাম। তখন সে রাগ করতেন, অভিমান করতেন। আমি তো কেবল (জীবন সংসার) পরিচালক হলাম। অনেক বড় বড় পরিচালক ওর কথা শুনতেন, শুনতে বাধ্য হতেন। পরে আমার ছবির রাশ দেখে, ডাবিং শেষে আমাকে বলতেন, ‘রাজু ভাই, আপনি ভালো পরিচালক হবেন।’

প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ ছেলে ছিলেন সালমান শাহ, বাইরে থেকে সেটা বোঝাই যেত না। আমি খুব কাছ থেকে সালমানকে দেখে বুঝেছি। তাকে সবাই পড়তে পারতেন না। ‘জীবন সংসার’-এর ১৫ নম্বর রিলে শাবনূরের বিষ খাওয়ার একটা সিকোয়েন্স আছে। শুটিং করার সময় সালমান শাহ-শাবনূর দুজনেই দরদ দিয়ে অভিনয় করেন। ওদের অভিনয়শৈলী গোটা এফডিসিতে সে সময় আলোড়ন তুলেছিল। তাদের আগ্রহ ছিল পুরো সিকোয়েন্সটা স্ক্রিনে দেখবেন, ডাবিং করার সময় খণ্ড খণ্ড দেখে ওদের মন ভরেনি। এই সিকোয়েন্সটা দেখার জন্য সালমান ল্যাবে এসে অনেক্ষণ বসেছিলেন। তখনও ১৫ নম্বর রিলটি প্রিন্ট হয়নি, বসে আছেন তো আছেনই ও আর ল্যাব ছেড়ে যান না! প্রিন্টিং ও ডেভেলপে সালমান নিজে গিয়ে ওদের বলেছিলেন, ভাই এই রিলটা আগে করে দিন। প্রজেকশন রুমে শুয়ে শুয়ে ও পুরো রিলটা দেখেন। শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসে আমাকে জাপটে ধরে রাখেন। কথা নেই, বার্তা নেই। সে কী বলতে চাইলেন, সে জানেন, আমি কী বুঝলাম, আমি নিজেও জানি না! এরপর ল্যাব ছেড়ে সে সোজা বেরিয়ে যান।

মৃত্যুর একদিন আগে শিবলি ভাইয়ের (শিবলি সাদিক) ছবির শুটিংয়ে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়। ও গাড়ির ওপর বসে শট দিচ্ছিলেন, আমি শুটিং স্পটের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে গাড়ির ওপর বসেই শিবলি ভাইকে বলছিলেন, জিনিস ছোট হলেই খারাপ হয় না। শিবলি ভাই প্রথমে বুঝতে পারেনি। কাছে গেলে শিবলি ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, সালমান ঠিকই বলেছে। তার প্রমাণ আমি সেন্সর বোর্ডে পেয়েছি। ওখানে আমার ছবির সেন্সর প্রিন্ট করাতে গেলে ওরা আমাকে বলেছিলেন, অনেক দিন পরে ভালো একটা ছবি (জীবন সংসার) দেখলাম। সালমানকে নিয়ে আমরা আরেকটি ছবি করার পরিকল্পনা করছিলাম ‘জীবন সংসার’-এর কাজ শেষ করার পরেই। সালমান তা জানতে পেরে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে কাজ করার জন্য অনেক পরিচালক, প্রযোজক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শিডিউল দিতে পারছি না। অনেকে হয়তো ছয় মাস ঘুরেও পাবেন না, কিন্তু আপনি ঘরে বসে পেয়ে যাবেন। আমার শিডিউল আপনাকে ভূতে জোগাড় করে দেবে। আপনি যেদিন নতুন ছবি পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন সেদিনই আমার কাছে চলে আসবেন। এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমান।’ ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমান’ সালমান শাহর এই কথাটি রাতে এখনো আমার কানে বাজে। যখন ওর কথা মনে পড়ে ভীষণ খারাপ লাগে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন