শক্তিমান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। প্রয়াত এই গুনী অভিনেতার প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
সাদেক বাচ্চু (মাহবুব আহমেদ সাদেক) ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর জেলায়। তিনি টি এন্ড টি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
১৯৬৩ সালে, বেতারে ‘খেলাঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন সাদেক বাচ্চু । ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে তিনি ‘গণনাট্য পরিষদ’ নামের একটি থিয়েটারের সাথে যুক্ত হন। ‘উম্মোচন’ ও ‘প্রথম পদক্ষেপ’ নামের আরো দুটি থিয়েটার দলের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করতেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ‘মতিঝিল থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘মতিঝিল থিয়েটার’ হয়ে মঞ্চে অভিনয় করার পাশাপাশি তিনি, নাটক রচনা ও নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাঁর রচিত ও নির্দেশিত নাটকগুলির মধ্যে ‘কাফনের পকেট নাই’, ‘কুলাঙ্গার’ ও ‘ক্যাপ’ উল্লেখযোগ্য।
১৯৭৪ সালে আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযোজিত ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকের মাধ্যমে, সাদেক বাচ্চু টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- ঝুমকা, পূর্ব রাত্রি পূর্বদিন, সুজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ, ঘর থেকে ঘরে, স্বপ্ন বাসরে, জোনাকী জ্বলে, গ্রন্থিকগণ কহে, প্রভৃতি।
সাদেক বাচ্চু প্রথম দিকে নায়ক হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও, পরবর্তিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় ও প্রশংসিত হন।
টেলিভিশনে নাটকের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সাদেক বাচ্চুর । তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে- সুখের সন্ধানে, চাঁদনী, সোনিয়া, ডিসকো ড্যান্সার, চাঁদাবাজ, দুঃসাহস, রঙ্গীন সুজন সখি, প্রিয়জন, আনন্দ অশ্রু, স্বামী কেন আসামী, মরণ কামড়, কে আমার বাবা, লাল বাদশা, অচল পয়সা, বন্ধু যখন শত্রু, কারিশমা, কোটি টাকার কাবিন, রণাঙ্গন, এ দেশ কার, শান্ত কেন অশান্ত, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, জানোয়ার, জমজ, ময়দান, আমার প্রাণের স্বামী, ভয়ংকর হামলা, বিয়ের প্রস্তাব, কোটি টাকার ফকির, পিতা মাতার আমানত, হৃদয় আমার নাম, বধূবরণ, প্রিয়া আমার প্রিয়া, মন বসে না পড়ার টেবিলে, মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি, আইনের হাতে গ্রেফতার, চিরদিন আমি তোমার, অরুণ শান্তি, মায়ের চোখ, আমার স্বপ্ন আমার সংসার, এক জবান, বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, একবার বলো ভালবাসি, গরীবের মন অনেক বড়, আদরের জামাই, বন্ধু তুমি আমার, দুর্ধর্ষ প্রেমিক, জিদ্দি মামা, ভালোবাসা জিন্দাবাদ, তোমার মাঝে আমি, গোলাপী এখন ঢাকায়, আদরের সন্তান, জীবন নদীর তীরে, ঢাকা টু বোম্বে, স্বপ্ন যে তুই, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু, ব্ল্যাক মানি, লাভ ম্যারেজ, কমিশনার, লাভার নাম্বার ওয়ান, ভালোবাসা সীমাহীন, দুই পৃথিবী, মহুয়া সুন্দরী, রাজা ৪২০, বসগিরি, মাটির পরী, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২, অহংকার, রাজনীতি, আপন মানুষ, মিসড কল, মার ছক্কা, মনে রেখো, আমি নেতা হবো, একটি সিনেমার গল্প, ডনগিরি, পদ্মার প্রেম, ইন্দুবালা, আই অ্যাম রাজ, বিদ্রোহী, এক পৃথিবী প্রেম, বীর, শাহেন শাহ্, ইত্যাদি।
২০১৫ সালে ‘লাভ ম্যারেজ’ ছবিতে, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এবং ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয়ের জন্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সাদেক বাচ্চু।
ব্যক্তিগতজীবন সাদেক বাচ্চু, শাহনাজ জাহানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
অভিনেতা-নাট্যকার-নির্দেশক সাদেক বাচ্চু। তিনি একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন । অভিনয়কে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন নাটক ও চলচ্চিত্রকে। অভিনয়ই ছিল তাঁর সবচেয়ে লাগার-ভালোবাসার জায়গা।
চলচ্চিত্রে সেইভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও, একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে ছিলেন বেশ জনপ্রিয় । শুধু খল অভিনেতাই নয়, চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির একজন নিবেদিত সুহৃদ অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, তাঁর কর্মের মাধ্যমেই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।